রবীন্দ্র-রচনাবলী যখন সকাল বেলা খুঁজে দেখি স্বপ্নে শোনা সে সুর এ কি আমার মেঠো ফুলের চোখের জলে উঠে ভাসি। এ সুর আমি খুঁজছিলেম রাজার ঘরে শেষে ধরা দিল ধরার ধূলির পরে। এ যে ঘাসের কোলে আলোর ভাষা আকাশ থেকে ভেসে-আসা, এ যে মাটির কোলে মানিক-খসা হাসিরাশি | মন্ত্রীর প্রবেশ মন্ত্রী। মহারাজ, বেতসিনীতীরে পিঞ্জরীতে বীনকার সুরসেনের বাস। যখন আপনি সেখানে যাওয়াই স্থির করেছেন তখন সেইসঙ্গে একটা রাজকাৰ্যও সম্পন্ন করতে পারেন। বিজয়াদিত | সেখানে রাজকাৰ্য আছে না কি ? মন্ত্রী ৷ ই মহারাজ । পিঞ্জীর রাজা সোমপাল প্রকাশ সভায় সর্বদাই মহারাজের নামে স্পর্ধাবাক৷ ব্যবহার করে থাকেন। তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন | বিজয়াদিত । বড়ো কৌতুহল হচ্ছে, মন্ত্রী। স্তুতিবাক্য অনেক শুনেছি, কিন্তু কোনোদিন নিজের কানে স্পর্ধাবাকা শুনি নি । মন্ত্রী। ভগবানের কৃপায় কোনোদিন যেন না শুনতে হয়। বিজয়াদিত। রাজা হবার ঐ তো বিড়ম্বনা | পরিহাস করে তোমরা আমাদের বল পৃথিবীপতি কিন্তু পৃথিবীকে সিংহাসনের মাপে ছোটাে করে তোমরা আমাদের খেলনা বানিয়ে দিয়েছ- সব দেখা দেখতে পাই নে, সব শোনা শোনবার জো নেই । মন্ত্রী। যাদের সব দেখাই দেখতে হয়, সব শোনাই শুনতে হয় তারাই তো হতভাগ । বিজয়াদিত্য | সেই হতভাগাদের দশাই আমি পরীক্ষা করে দেখব । সোমপালের স্পর্ধাবাক আমি নিজের কানে শুনব । মন্ত্রী। তা হলে শেখরই মহারাজের সঙ্গে যাবেন, আর কেউ না ? শেখর। না মন্ত্রী, এ-যাত্রায় আমার প্রয়োজন নেই | জানলার দরকার হয় যেখানে প্রাচীর আছে— যেখানে খোলা আকাশ সেখানে জানলায় কী হবে--- রাজসভায় কবিকে না হলে চলে না। মন্ত্রী। তোমার কথা বুঝলেম না। শেখর। মহারাজ, চার দিকের ভূভঙ্গ দেখে বুঝতে পারছি আপনি চলে গেলে কবির পক্ষে এখানে অরাজক হবে । আমিও আপনারই পথ ধরলেম । বিজয়াদিতা। ভালো হল কবি, আজ শরতের নিমন্ত্রণ রাখতে চলেছি- তুমি সঙ্গে না থাকলে তার প্রতিসম্ভাষণের বাণী পেতেম কোথায় ?
