পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা সমুদ্র-ঢেউ যেমন বঁাধন টুটে ফিরে ফিরে ফুলে ফুলে কুলে কুলে দুলে দুলে পড়ে লুটে লুটে দুরন্ত তার দুষ্টুমিটি তেমনি বিষম বলে দিনের মধ্যে সহস্রাবার করে বাপের বক্ষ দিত অসীম চঞ্চলতায় ভরে । বয়সের এই পর্দা-ঘেরা শান্ত ঘরে আমার মধ্যে একটি সে কোন চির-বালক লুকিয়ে খেলা করে ; বিজুর হাতে পেলে নাড়া সেই যে দিত সাড়া । সেইখানে তার সাথি ছিলেম। সকল প্ৰাণে মনে । আমার বক্ষ সেইখানে এক তালে উঠত বেজে তারই খেলার অশান্ত গোলমালে । বৃষ্টিধারা সাথে নিয়ে মোদের দ্বারে ঝড় দিত যেই হানা মাঠের মধ্যে ছুটে গেছি। উদাম বিদ্রোহে । পাকা আমের কালে দুপুরবেলায় খেয়েছি আম করে কড়াকড়ি— তাই দেখে সব পাড়ার লোকে বলে গেছে, “বিষম বাড়াবাড়ি ।” বারে বারে আমার লেখার ব্যাঘাত হত, বিজুর মা তাই রেগে বলত তারে “ দেখিস নে তোর বাবা আছেন কাজে ?” বিজু। তখন লাজে বাইরে চলে যেত । আমার দ্বিগুণ ব্যাঘাত হত লেখাপড়ায় ; মনে হত, “ টেবিলখানা কেউ কেন না নড়ায় ।” ভোর না হতে রাতি সেদিন যখন বিজু গেল ছেড়ে খেলা, ছেড়ে খেলার সাথি, মনে হল এতদিনে বুড়ো—বয়সখানা পুরল ষোলো-আনা । কাজের ব্যাঘাত হবে না। আর কোনোমতে, চলব। এবার প্রবীণতার পাকা পথে লক্ষ্য করে বৈতরণীর ঘাট, গভীরতার স্তম্ভিত ভার বহন করে প্রাণটা হবে কাঠ । দৌড়োবে মন লেখার খাতার শুকনাে পাতে পাতে— \Ο\O