পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

محی &ቮml 8 と" ধাবিত হইয়াছে— স্বাথের ঝঞাবায়ু প্ৰলয়গৰ্জনে চারি দিকে পাক খাইয়া ফিরিতেছে- হে বিধাতঃ, পৃথিবীর লোক আজ তােমার সিংহাসন শূন্য মনে করিতেছে, ধর্মকে অভ্যাসজনিত সংস্কারমাত্র মনে করিয়া নিশ্চিন্তচিত্তে যথেচ্ছাচারে প্রবৃত্ত হইয়াছে— হে শান্তং শিবমদ্বৈতম, এই ঝঞ্ঝাবর্তে আমরা ক্ষুব্ধ হইব না, শুষ্কমৃত পত্ররাশির ন্যায় ইহার দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া ধূলিধ্বজ তুলিয়া দিকবিদিকে ভ্ৰাম্যমাণ হইব। না— আমরা পৃথিবীব্যাপী প্ৰলয়-তাণ্ডবের মধ্যে এক মনে একাগ্ৰনিষ্ঠায় এই বিপুল বিশ্বাস যেন দৃঢ়ৰূপে ধারণা করিয়া থাকি যে— অধমেণৈধতে তাবৎ ততো ভদ্রাণি পশ্যতি ততঃ সপত্নান জয়তি সমূলস্তু বিনশ্যতি | অধর্মের দ্বারা আপাতত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়া যায়, আপাতত মঙ্গল দেখা যায়, আপাতত শত্রুরা পরাজিত হইতে থাকে, কিন্তু সমুলে বিনাশ পাইতে হয়। V একদিন নানা দুঃখ ও আঘাতে বৃহৎ শ্মশানের মধ্যে এই দুর্যোগের নিবৃত্তি হইবে- তখন যদি মানবসমাজ এই কথা বলে যে, শক্তির পূজা, ক্ষমতার মত্ততা, স্বার্থের দারুণ দুশ্চেষ্টা যখন প্রবলতম, মোহান্ধকার যখন ঘনীভূত এবং দলবদ্ধ ক্ষুধিত আত্মম্ভরিতা যখন উত্তরে-দক্ষিণে পূর্বে-পশ্চিমে গর্জন করিয়া ফিরিতেছিল, তখনো ভারতবর্ষ আপনি ধর্ম হারায় নাই, বিশ্বাস ত্যাগ কবে নাই, একমাত্র নিত্যসত্যের প্রতি নিষ্ঠ স্থির রাখিয়াছিল- সকলের উর্ধে নির্বিকার একের পতাকা প্রাণপণ দৃঢ়মুষ্টিতে ধরিয়াছিল— এবং সমস্ত আলোড়ন গর্জনের মধ্যে মাভৈঃ মন্ত্র উচ্চারণা করিয়া বলিতেছিল ; আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্ধান ন বিভেতি কৃতশ্চন । একের আনন্দ ব্রহ্মের আনন্দ, যিনি জানিয়াছেন, তিনি কিছু | হইতেই ভয়প্রাপ্ত হন না । ইহাই যদি সম্ভবপর হয়, তবে ভারতবর্যে ঋষিদের জন্ম, উপনিষদের শিক্ষা, গীতার উপদেশ, বহু শতাব্দী হইতে নানা দুঃখ ও অবমাননা, সমস্তই সার্থক হইবে—- ধৈর্যের দ্বারা সার্থক হইবে, ধর্মের দ্বারা সার্থক হইবে, ব্রহ্মের দ্বারা সার্থক হইবে— দম্ভের দ্বারা নহে, প্ৰতাপের দ্বারা নহে, স্বার্থসিদ্ধির দ্বারা নহে । ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ | >T国 >○○お প্রাচীন ভারতের “একঃ” বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেকস্তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম | বৃক্ষের ন্যায় আকাশে স্তব্ধ হইয়া আছেন সেই এক ! সেই পুরুষে সেই পরিপর্ণে এ সমস্তই পুণ । যথা সীেমা বয়াংসি বাসোবৃক্ষং সম্প্রতিষ্ঠান্তে এবং হ বৈ তং সৰ্ব্বং পর আত্মনি সম্প্রতিষ্ঠতে | হে সৌম্য, পক্ষিসকল যেমন বাসবৃক্ষে আসিয়া স্থির হয়, তেমনি এই যাহা-কিছু সমস্তই পরমাত্মায় প্রতিষ্ঠিত হইয়া থাকে । নদী যেমন নানা বক্রপথে সরলপথে, নানা শাখা-উপশাখা বহন করিয়া, নানা নিৰ্ব্বারপারায় পরিপষ্ট হইয়া, নানা বাধাবি (ত্তি ভেদ করিয়া এক মহাসমুদ্রের দিকে ধাবমান হয়— মানুয্যের চিত্ত সেইরূপ গম্যস্থান না জানিয়াও অসীম বিশ্ববৈচিত্র্যে কেবলই এক হইতে আর একের-দিকে কোথায় চলিয়াছিল ; কুতুহলী বিজ্ঞান খণ্ড খণ্ড পদার্থের দ্বারে দ্বারে অণুপরমাণুর মধ্যে কাহার সন্ধান করিতেছিল ? স্নেহ-প্ৰীতি পদে পদে বিরহ-বিস্মৃতি-মৃত্যু-বিচ্ছেদের দ্বারা পীড়িত হইয়া, অন্তহীন তৃষ্ণার দ্বারা তাড়িত হইয়া, পথে পথে কাহাকে প্রার্থনা করিয়া ফিরিতেছিল ? ভয়াতুরা ভক্তি তাহার পূজার অর্ঘ্য মন্তকে লইয়া অগ্নি-সূৰ্য-বায়ু-বৰ্জ মেঘের মধ্যে কোথায় উদভ্ৰান্ত হইতেছিল ? এমন সময়ে সেই অন্তবিহীন পথপরম্পরায় ভ্ৰাম্যমাণ দিশহারা পথিক শুনিতে পাইল— পথের প্রান্তে ছায়া-নিবিড় তপোবনের গভীরমন্ত্রে এই বার্তা উদগীত হইতেছে ; বৃক্ষ ইব স্তব্ধো দিবি তিষ্ঠত্যেক স্তেনেদং পূর্ণং পুরুষেণ সর্বম। বৃক্ষের ন্যায় আকাশে স্তব্ধ হইয়া আছেন সেই এক | সেই