পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

やりの8 রবীন্দ্র-রচনাবলী কেবলই তাকে নূতন নূতন কৃত্রিমতা রচনা করে চলতে হয়, কোথাও থামতে গেলেই তার প্রাণ বেরিয়ে शां । এইজন্যে যারা সাধক, পরমার্থ লাভের জন্যে নিজের শক্তিকে র্যাদের খাটানো আবশ্যক, র্তারা অনেক সময়ে পাহাড়ে পর্বতে নির্জনে লোকালয় থেকে দূরে চলে যান। শক্তির নিরন্তর অজস্র অব্যয়কে তারা বীচ্যুতে চান! কিন্তু বাইরে এই নির্জনতা, এই পর্বতগুহা কোথায় খুঁজে বেড়াবা ? সে তো সব সময় জোটে না এবং মানুষকে একেবারে ত্যাগ করে যাওয়াও তো মানুষের ধর্ম নয়। এই নির্জনতা, এই পর্বতগুহা, এই সমুদ্রতীর আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই আছে- আমাদের অন্তরের মধ্যেই আছে। যদি না থাকত তা হলে নিৰ্জনতায় পর্বতগুহায় সমুদ্রতীরে তাকে পেতুম না। সেই অন্তরের নিভৃত আশ্রমের সঙ্গে আমাদের পরিচয়সাধন করতে হবে । আমরা বাইরেকেই অত্যন্ত বেশি করে জানি, অন্তরের মধ্যে আমাদের যাতায়াত প্ৰায় নেই, সেইজন্যেই আমাদের জীবনের ওজন নষ্ট হয়ে গেছে । অর্থাৎ, আমরা নিজের সমস্ত শক্তিকে বাইরেই অহরহ এই-যে নিঃশেষ করে ফতুর হয়ে যাচ্ছি, বাইরের সংস্রব পরিহার করাই তার প্রতিকার নয়- কারণ, মানুষকে ছেড়ে মানুষকে চলে যেতে বলা, রোগের চেয়ে চিকিৎসাকে গুরুতর করে তোলা । এর যথার্থ প্ৰতিকার হচ্ছে ভিতরের দিকেও আপনার প্রতিষ্ঠা লাভ করে অস্তরে বাহিরে নিজের সামঞ্জস্য স্থাপন করা । তা হলেই জীবন সহজেই নিজেকে উন্মত্ত অপব্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। । নইলে একদল ধর্মলুব্ধ লোককে দেখতে পাই তারা নিজের কথাকে, হাসিকে, উদ্যমকে কেবলই মানদণ্ড হাতে করে হিসাবি কৃপণের মতো খর্ব করছে। তারা নিজের বরাদ্দ যতদূর কমানো সম্ভব তাই কমিয়ে নিজের মনুষ্যত্বকে কেবলই শুষ্ক কৃশ আনন্দহীন করাকেই সিদ্ধির লক্ষণ বলে মনে করছে। কিন্তু এমন করলে চলবে না। আর যাই হােক, মানুষকে সম্পূর্ণ সহজ হতে হবে ; উদ্দামভাবে বেহিসাবি হলেও চলবে না, কৃপণভাবে হিসাবি হলেও চলবে না। এই মাঝখানের রাস্তায় দাড়াবার উপায় হচ্ছে- বাহিরের লোকালয়ের মধ্যে থেকেও অন্তরের নিভৃত নিকেতনের মধ্যে নিজের প্রতিষ্ঠা রক্ষা করা। বাহিরই আমাদের একমাত্র নয় অন্তরেই আমাদের গোড়াকার আশ্রয় রয়েছে তা বারংবার সকল আলাপের মধ্যে, আমোদের মধ্যে, কাজের মধ্যে অনুভব করতে হবে। সেই নিভৃত ভিতরের পথটিকে এমনি সরল করে তুলতে হবে যে, যখন-তখন ঘোরতর কাজকর্মের গোলযোগেও ধ্যা করে সেইখানে একবার ঘুরে আসা কিছুই শক্ত হবে না । সেই- যে আমাদের ভিতরের মহলটি আমাদের জনতাপূর্ণ কলরবমুখর কাজের ক্ষেত্রের মাঝখানে একটি অবকাশকে সর্বদা ধারণ করে আছে, বেষ্টন করে আছে, এই অবকাশ তো কেবল শূন্যতা নয়। তা স্নেহে প্রেমে আনন্দে কল্যাণে পরিপূর্ণ। সেই অবকাশটিই হচ্ছেন তিনি র্যার দ্বারা উপনিষৎ জগতের সমস্ত কিছুকেই আচ্ছন্ন দেখতে বলেছেন । ঈশাবাস্যমিদং সৰ্বং যৎকিঞ্চি জগত্যাং জগৎ । সমস্ত কাজকে বেষ্টন করে, সমস্ত মানুষকে বেষ্টন করে, সর্বত্রই সেই পরিপূর্ণ অবকাশটি আছেন ; তিনিই পরস্পরের যোগসাধন করছেন এবং পরস্পরের সংঘাত নিবারণ করছেন। সেই ঠাকেই নিভৃত চিত্তের মধ্যে নির্জন অবকাশরাপে নিরন্তর উপলব্ধি করবার অভ্যাস করো, শান্তিতে মঙ্গলে ও প্রেমে নিবিড়ভাবে পরিপূর্ণ অবকাশরাপে তাকে হৃদয়ের মধ্যে সর্বদাই জানো। যখন হাসছ খেলছ কাজ করছ তখনো একবার সেখানে যেতে যেন কোনো বাধা না থাকে- বাহিরের দিকেই একেবারে কত হয়ে উলটে পড়ে তোমার সমস্ত-কিছুকেই নিঃশেষ করে ঢেলে দিয়ে না। অন্তরের মধ্যে সেই প্রগাঢ় অমৃতময় অবকাশকে উপলব্ধি করতে থাকলে তবেই সংসার আর সংকটময় হয়ে উঠবে না, বিষয়ের মুমুঠতে পারবে না-বাছুৰিত হবে না আলেক মলিন হবেন, তাপে সমস্ত মন গুপ্ত शा না | ভাবো তারে অন্তরে যে বিরাজে, অন্য কথা ছাড়ো না । সংসারসংকটে ত্ৰাণ নাহি কোনোমতে বিনা তার সাধনা । ৩ ফাল্গুন