পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

থাকিতেন। পালিতকন্যাকে অতিশয় ভালবাসিতেন, ভোজনের সময় কন্যাকে নিকটে না দেখিলে তাঁহার আহার হইত না, রজনীতে কখনও কখনও শাস্ট্রের গল্প বলিতেন, সরয বসিয়৷ শনিতেন। এতস্তিন্ন প্রায়ই আপন কাব্যে রত থাকিতেন, বালিকার মনে একদিন একটী নতন ভাব উদয় হইল, বদ্ধ জনাদন কেমন করিয়া জানিবেন ? f বালিকার হৃদয়ে একদিন সহসা যে ভাব উদয় হয়, তাহা অধিক দিন স্থায়ী হয় না। একদিন সন্ধ্যাকালে সরযর হৃদয়ে সহসা যে ভাবের উদ্রেক হইল, তাহা দই চারি দিবসের মধ্যে অনেকটা হ্রাস প্রাপ্ত হইল। তথাপি নারীর হৃদয়ে এরপে ভাব একেবারে লীন হয় না, মধ্যে মধ্যে সেই তরণ যোদ্ধার কথা সরযর হৃদয়ে জাগরিত হইত। বিশেষ সরয জন্মাবধি একাকিনী, জনাদন ভিন্ন তিনি ভালবাসিবার লোক কাহাকেও কখনও দেখেন নাই, কাহাকেও জানিতেন না, সতরাং বাল্যকাল অবধিই ধীর, শাস্ত, চিস্তাশীল। প্রথম যৌবনে ষে রপে দেখিয়া একদিন সরষরে হৃদয় আলোড়িত হইল, সায়ংকালে, প্রভাতে ও গভীর রজনীতে সেই রূপটি সময়ে সময়ে সরযর হৃদয়ে জাগরিত হইত। কল্পনা মায়াবিনী! সরয যখন দিনান্তে একাকিনী গবাক্ষপাশ্বে বসিয়া থাকিতেন, অথবা নিশীথে চন্দ্রালোকে সেই পম্পোদ্যানে বিচরণ করিতেন, তখন কত রপে কল্পনা তাহার হৃদয়ে জাগরিত হইত। সেই তরণে যোদ্ধা এতদিনে যুদ্ধের উল্লাসে মগ্ন হইয়াছেন, দাগ হস্তগত করিয়াছেন, শত্র ধবংস করিতেছেন, বিক্রম ও বাহুবলে বীর নাম ক্রয় করিতেছেন, সরযর কথা । কি একবার তাঁহার মনে জাগরিত হয় ? পরেষের মন নানা কাৰ্য্য, নানা চিন্তা, নানা শোক, নানা উল্লাসে সব্বদাই পরিপণ থাকে। জীবন আশাপণ, নানা আশায় অতিবাহিত হয়, আশা ফলবতী হউক আর নাই হউক, জীবন সব্বদা উল্লাসপাণ থাকে। রাজস্থারে, যুদ্ধক্ষেত্রে, শোকগহে বা নাট্যশালায়, নানা কায্যে, নানা চিন্তায় পাণ থাকে, তাহারা কি এক চিন্তা চিরকাল হৃদয়ে ধারণ করে ? তথাপি মায়াবিনী আশা সরয়াকে কানে কানে বলিয়া দিত,–বোধ হয় কখন কখন সরষরে কথা সেই তরণ যোদ্ধার হৃদয়ে জাগরিত হয়। আবার চিন্তা আসিত;—তরণ যোদ্ধা কি এখনও এ তোরণ দগের কথা ভাবেন ? এ কালে এ বয়সে কি তাঁহার মন স্থির আছে ? হায়! নদীর উমি পাশ্বাস্থ পপটীকে লইয়া ক্ষণকাল খেলা করে, পাপ আনন্দে নাচিয়া উঠে; তাহার পর উমি কোথায় চলিয়া যায়, পাপটী শকাইয়া যায়, কিন্তু জল আর ফেরে না। তথাপি মায়াবিনী আশা সরযর কানে কানে বলিয়া দিত,—বোধ হয় একদিন সেই তরণে যোদ্ধা তোরণ দাগে ফিরিয়া আসিবেন। নিশীথে যখন সেই উন্নত দাগ ও চারিদিকে পর্বতমালা চন্দ্রের সাধাকিরণে নিস্তন্ধে সাপ্ত হইত, তখন নীল আকাশ ও শত্র চন্দ্রের দিকে চাহিতে চাহিতে বালিকার হৃদয়ে কত কল্পনা উদয় হইত, কে বলিবে ? বোধ হইত যেন সেই পৰ্বত-পথ দিয়া একজন নবীন অশ্বারোহী আসিতেছেন, অশ্ব শ্বেতবর্ণ, আরোহীর গচ্ছ গুচ্ছ কেশ ললাট ও নয়ন ঈষৎ আবত করিয়াছে। যেন দুগে আসিয়া অশ্বারোহী অবতরণ করিলেন, যেন তাঁহার মস্তকে স্বর্ণ-খচিত শিরসাণ, বলিষ্ঠ সগোল বাহতে সবর্ণের বাজ, দক্ষিণহস্তে দীঘ বশী। যেন যোদ্ধা আবার আহার করিতে বসিলেন, সরয তাঁহাকে ভোজন করাইতেছেন। অথবা রজনীতে সেই ছাদে সর্য সেই যোদ্ধার নিকট সলঙ্গজ হইয়া দণ্ডায়মান রহিয়াছেন, যোদ্ধাও যেন আনন্দের সহিত সরযর নিকট যুদ্ধকথা বর্ণনা করিতেছেন। কল্পনার শেষ নাই, অগাধ সমুদ্র-হিল্লোলের ন্যায় একটীর পর একটী আইসে, তাহার পর আর একটী। সরয আবার ভাবিলেন, যেন যন্ধে হইয়া গিয়াছে, তরণ সেনাপতি বহন খ্যাতিলাভ করিয়াছেন, বড় উপাধি পাইয়াছেন, কিন্তু সরয়াকে ভুলেন নাই। যেন পিতা তাঁহার সহিত সরযর বিবাহ দিতে সম্মত হইলেন, যেন ঘর লোকে পরিপািণ, চারিদিকে দীপ জলিতেছে, বাদ্য বাজিতেছে, গীত হইতেছে, আর কত কি হইতেছে সরয জানেন না, ভাল দেখিতে পাইতেছেন না। যেন সরয অবগাঠনবতী হইয়া সেই দেব-প্রতিমাত্তি'র নিকট বসিলেন। যেন যবেকের হস্তে আপন বেদাক্ত কপিত হস্তট রাখিলেন, যেন রজনীতে সেই জীবিতেশ্বরকে পাইলেন। আনন্দে বালিকা-হৃদয় সফীত হইল, সরয ! সরয়া! পাগলিনী হইও না। আবার কল্পনা আসিল। রঘুনাথ খ্যাতাপন্ন হন নাই, রঘুনাথ উপাধি প্রাপ্ত হন নাই, রঘুনাথ দরিদ্র, কিন্তু সরয়াকে বিবাহ করিয়াছেন। পাবতের নীচে ঐ যে সন্দের উ ゞ お0