পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/২৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃষকের বাটীতে দাসীবত্তি স্বীকার করিয়াছিলেন। কৃষকের কিছু সম্পত্তি ছিল, মহাজনী ছিল, নাম গোকণনাথ। গোকর্ণের অন্তঃকরণ সরল ও স্নেহযক্ত, রাজপত-কন্যাকে নিজের বাটীতে আশ্রয় দিতে স্বীকার করিলেন। গোকর্ণের গহিণীও স্বামীর উপযুক্ত, নিরাশ্রয় ভদ্র রাজপত-কন্যাকে দেখিয়া অবধি নিজের কন্যার ন্যায় লালন-পালন করিতেন। সরযও কৃতজ্ঞ হইয়া গোকণ ও তাঁহার সন্ত্রীর যথোচিত সমাদর করিতেন, নিজে দুই বেলা অন্ন প্রস্তুত করিতেন, বালিকার তত্ত্বাবধারণ করতেন, সতরাং কৃষক ও কৃষকপত্নীর কায্যের অনেক লাঘব হইল, তাঁহারাও দিন দিন সরযর উপর অধিক প্রসন্ন হইতে লাগিলেন। রঘুনাথের অবত্তমানে যদি সরযর কোথাও সখের সম্ভাবনা থাকিত, তবে উদারস্বভাব গোকণনাথ ও তাঁহার সরলা গহিণীর বাটীতে থাকিয়া সরয পরম সংখলাভ করিতে পারিতেন। গোকর্ণের বয়ঃক্রম ৪৫ বৎসর হইবে, কিন্তু চিরকাল নিয়মিত পরিশ্রম করিতেন বলিয়া এখনও শরীর সবদ্ধ ও বলিষ্ঠ। গোকর্ণের একটী পত্র শিবজীর সৈনিক, বহুদিন অবধি বাটী ত্যাগ করিয়াছে। শেষে যে একটী কন্যা হইয়াছিল, পিতামাতা উভয়েই তাহাকে ভালবাসিতেন । প্রাতঃকালে গোকণ কৃষিকাযে বা অন্য কায্যে বাহির হইয়া যাইতেন, সরয গহের সমস্ত কাৰ্য্য নিবাহ করিতেন। গহিণী অনেক সময় বলিতেন,—বাছা, তুমি ভদ্রলোকের মেয়ে, এরপে পরিশ্রম করিলে তোমার শরীর থাকিবে কেন ? তোমার করিতে হইবে না, আমিই করিব। সরয়া সস্নেহে উত্তর করিতেন,—মা, তুমি আমাকে যেরপে যত্ন কর, তোমার কাজ করিতে পরিশ্রম হয় না, আমি জন্ম জন্ম তোমার সেবা করিব, তুমি আমাকে এইরুপ স্নেহ করিও । সরয ! বাছা তোর মত মেয়ে আমি কখন দেখি নাই। যদি তোর মত আমাদের জাতের একটী মেয়ে পাই, তবে আমার ছেলের সঙ্গে বিবাহ দিই। পত্রে অনেক দিন গহত্যাগ করিয়াছে, সে-কথা সমরণ করিয়া প্রাচীনা ক্ষণেক রোদন করিলেন। এইরপে কয়েকমাস অতিবাহিত হইল। একদিন সায়ংকালে গোকণনাথ গহিণীর নিকট বসিয়া আছেন, একপ্রান্তে সরয বালিকাকে ক্রোড়ে করিয়া বসিয়া রহিয়াছেন, এরপে সময়ে গোকণ বলিলেন,—গহিণী, শাস্ত হও, আজ সনসংবাদ আছে। গহিণী। আহা তোমার মনখে ফুল-চন্দন পড়কে, বাছা ভীমজীর কোন সংবাদ পাইয়াছ ? গোকণ । শীঘ্রই পাইব। পত্র শিবজীর সহিত দিল্লী গিয়াছিল, আদ্য শানিলাম শিবজী সঙ্গে আসিবে। গৃহিণী । আহা ভগবান তাহাই করন, প্রায় এক বৎসর হইল বাছাকে না দেখিয়া যে মন কি অবস্থায় আছে তা ভগবানই জানেন। গোকৰ্ণ । ভীমজী অবশ্যই আসিবে, সে রঘুনাথজী হাবিলদারের অধীনে কাৰ্য্য করিত, রঘুনাথজীরও সংবাদ পাইয়াছি। সরযর হৃদয় নত্য করিয়া উঠিল, উদ্বেগে শ্বাস রুদ্ধ করিয়া তিনি গোকর্ণের কথা শুনিতে লাগিলেন। গোকণ বলিতে লাগিলেন—যেদিন রঘুনাথকে বিদ্রোহী বলিয়া শিবজী দরে করিয়া দেন সেদিন পত্র আমাদের কি বলিয়াছিল মনে আছে ? গহিণী। আমি মেয়েমানুষ, আমার কি অত মনে থাকে ? গোকণ। পত্র বলিয়াছিল-পিতা, আমি হাবিলদারকে চিনি, তাঁহার ন্যায় বীর শিবজীর সৈন্যে আর নাই। কি ভ্ৰমে পতিত হইয়া রাজা তাঁহার অবমাননা করিলেন, পশ্চাৎ ফুল অফ দি লৱে ল আন গলি লে বা দল সত্ৰ る | সহিগতি হইতে লাগিল । গোকণনাথ বলিতে লাগিলেন,—রঘুনাথজী ছদ্মবেশে রাজার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লী গিয়াছিলেন, আপন বৃদ্ধিকৌশলে রাজাকে উদ্ধার করিয়াছেন, সম্পর্ণেরুপে আপন নিন্দোষিতা প্রমাণ করিয়াছেন। শনিয়াছি, শিবঁজী রঘুনাথের নিকট আপন দোষের ক্ষমা চাহিয়াছেন, রঘুনাথকে ভ্রাতা বলিয়া আলিঙ্গন করিয়াছেন, হাবিলদারের পদ হইতে একেবারে পাঁচহাজারী করিয়া ミ○a