পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভীষ্ট সিদ্ধ করবেন না। তেজসিংহ নিঃসঙ্কোচে শত্রদেগে শহৈেসন্যের মধ্যে আপন অলপ সৈন্য লইয়া বাস করিতে লাগিলেন, কেননা দতজয়সিংহ রাজপত, বিদেশীয় যুদ্ধের সময় .তেজসিংহের উপর কদাচ হস্তক্ষেপ করিবেন না। তেজসিংহ ও দজয়সিংহ উভয়েই অসাধারণ সাহসী, কিন্তু এক্ষণে পরস্পরের বক্তমানে অধিকতর বীরত্ব প্রকাশ করিতে লাগিলেন। যে স্থানে অতিশয় বিপদ হইত, যে স্থানে শত্রগণ অসংখ্য বলে আক্রমণ করিত, তেজসিংহ ও দক্ষজয়সিংহ উভয়েই সেই স্থানে প্রথমে যাইবার উদ্যম করিতেন, কেননা রাঠোর চন্দাওয়ৎ অপেক্ষা হীন নহে, চন্দাওয়ৎ রাঠোর অপেক্ষা হীন নহে। একদিন নিশার যুদ্ধে শত্রগণ দগের একটী দ্বার ভগ্ন করিয়া ফেলিল, ও সেই পথ দিয়া মোগলগণ দগে প্রবেশ করিবার উপক্ৰম করিল। দগাবাসী এই বিপদ দেখিয়া যেন চকিতের ন্যায় রহিল, সহসা তেজসিংহ বজ্রনাদে কতিপয় মাত্র রাঠোর সঙ্গে লইয়া শত্রমধ্যে পড়িলেন, অসারবলে তাহাদিগের গতিরোধ করিলেন। অমানষিক বেগে শত্রুসেনা ছিন্নভিন্ন করিয়া দগম্বার অতিক্ৰম করিলেন, পরেপশ্চাতে দ্বার রুদ্ধ হইলে লম্ফ দিয়া প্রাচীর অতিক্রম করিয়া শোণিতাপ্লতদেহে দগে প্রবেশ করিলেন ! এই অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়া সমস্ত দগাবাসী জয়নাদে দগে পরিপণ করিল। দন্জেয়সিংহ সে বীরত্ব দেখিলেন, সে জয়নাদ শুনিলেন, রজনী প্রভাত হইলে দগম্বার উদঘাটন করিবার আদেশ দিলেন। দ্বিশতমাত্র চন্দাওয়ং লইয়া দন্দমনীয় তেজে সহসা পঞ্চশত মোগলকে আক্রমণ করিলেন, সহসা আক্রান্ত মোগলগণ সে সরোষ আক্রমণে ছিন্নভিন্ন হইয়া পৰ্বত হইতে অবতরণ করিয়া পলাইল। অসমসাহসী চন্দাওয়ৎ পনরায় দগে প্রবেশ করিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলেন, চন্দাওয়তের বীরত্ব্যশে দগ’ পরিপরিত হইল! এইরুপ পরস্পর পরস্পরের বীরত্বে যেন কুদ্ধ হইয়াই অসাধারণ সাহসের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। রজনীতে শয্যা তুচ্ছ করিয়া চন্দ্রালোকে উভয়ে প্রাচীরের উপর পদচারণ করিতেন, শত্র“সেনা লক্ষ্য করতেন, শত্রর আক্রমণ প্রতীক্ষা করিতেন, আপন আপন সৈন্যগণকে সাহস দান করতেন। শত্রগণকে অসতক দেখিলেই উভয়ে মিলিত হইয়া নৈশ আক্রমণে শত্রসেনা ছারখার করিতেন, ভ্রাতার ন্যায় একের পাশ্বে অন্যে যুদ্ধ করিতেন, উভয়েই অগ্রসর হইবার চেস্টা করিতেন, কেহই অন্য অপেক্ষা অগ্রসর হইতে পারিতেন না। শত্র সেনা ছারখার করিয়া চন্দাওয়ৎ ও রাঠোর একত্রে দগে প্রবেশ করিতেন, পরিশ্রান্ত তেজসিংহ ও দন্জয়সিংহ প্রাচীরের উপর একই স্থানে উপবেশন করিয়া সামান্য রটেী ও অপরিস্কার জলে ক্ষৎপিপাসা নিবন্ত্তি করিতেন, পরে যখন পাবদিক রক্তিমাচ্ছটায় রঞ্জিত হইত, সেই প্রস্তরনিমিত প্রাচীরের উপর ভ্রাতৃদ্বয়ের ন্যায় দুইজন পরম শত্র নিঃসঙ্কোচে নিশ্চিন্তভাবে নিদ্রা যাইতেন। রাজপত-ইতিহাসের প্রারম্ভ হইতে শেষ পৰ্য্যন্ত পাঠ কর, কপটাচারিতার পরিচয় নাই, সত্যভঙ্গের পরিচয় নাই, পরম শত্রর সহিতও অন্যায় সমরের বা বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় নাই। সম্রাটের বাক্য লঙ্ঘন হইয়াছে, সন্ধিপত্র লঙ্ঘন হইয়াছে, রাজপতের সত্য লঙ্ঘন হয় নাই। এইরুপে কয়েক মাস অতিবাহিত হইল, অবশেষে সৰ্য্যেমহলের খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের অভাব হইতে লাগিল, তখন রাজপরিবারকে আর এ দুগে রাখা বিধেয় বোধ হইল না। অতিশয় যত্নে রাজপরিবারকে ভীমগড় দগে প্রেরণ করা হইল, দতজয়সিংহ ও অন্যান্য যোদ্ধগণ নিজ নিজ পরিবারকে অন্যান্য স্থানে প্রেরণ করিলেন, পরে যোদ্ধগণ অদ্ধেক ভোজনে প্রাণধারণ করিয়া তখনও দাগ রক্ষা করিতে লাগিলেন। মনষ্যের যাহা সাধ্য, রাজপতগণ তাহা করিল। আরও একমাস দাগ রক্ষা করিল, কিন্তু অনাহারে প্রাণধারণ করা মনষ্যের সাধ্য নহে। সৰ্য্যেমহলের দ্বার অবশেষে উদ্ঘাটিত হইল, মোগলগণ ভীষণনাদে দাগে প্রবেশ করিল, দাগের মধ্যে মোগল ও রাজপতে মহাকোলাহলে যুদ্ধ আরম্ভ হইল। সে যুদ্ধ বর্ণনা করিতে আমরা অক্ষম, বর্ণনা করিবার আবশ্যকও নাই। রাজপতগণ মৃত্যু নিশ্চয় জানিলে মানরক্ষার জন্য কিরাপে যন্ধে করে, ইতিহাসের প্রত্যেক পত্রে তাহা বণিত আছে। মনষ্যের যাহা সাধ্য, রাজপতগণ তাহা সাধিল, কিন্তু দশের সহিত একের যুদ্ধ সম্ভবে না, রাজপত হীনসংখ্য হইয়া ক্রমে হটিতে লাগিল। যুদ্ধতরঙ্গ প্রাঙ্গণ হইতে তোরণে, তোরণ হইতে গহমধ্যে গড়াইতে লাগিল, বন্দকের ধ্যমে ○O>