পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী অবলা। আপনার পড়িতে কিছর বাকি নাই, যেগুলি আমাদের ধমের মলে শাস্ত্র, তাহার মন্ম কি, এ দরিদ্র অনাথাকে বঝাইয়া বলন, আমার মন বড় ব্যাকুল হইয়াছে। শুনিয়াছি কলিকাতার কোন কোন প্রধান পণ্ডিত বলেন যে, শাস্ত্রে বিধবাবিবাহ নিষিদ্ধ নহে; কিন্তু আপনার মুখে সে কথা না শুনিলে আমি তাহা বিশ্বাস করিব না। আপনার মতই আমার বেদবাক্য। * গরদেব অনেকক্ষণ চিন্তা করিতে লাগিলেন। শেষে ধীরে ধীরে কহিলেন—মা, তুমি যখন জিজ্ঞাসা করিতেছ, আমি কিছই লুকাইব না, আমার মনের কথা তোমাকে বলিব। তুমি যে পণ্ডিতের কথা বলিতেছ, তিনি আমার সহাধ্যায়ী ছিলেন, তাঁহার প্রগাঢ় শাসবিদ্যা আমি জানি, তাঁহার প্রগাঢ় সত্যপ্রিয়তা আমি জানি। মা, একদিন আমি বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সহিত বিধবাবিবাহ লইয়া অনেক আলোচনা করিয়াছিলাম, অনেক কলহ করিয়াছিলাম, তখন আমি শাস্ত্রবিদ্যাভিমানী ছিলাম। কিন্তু মা, বাল্যকাল হইতে সেই পণ্ডিতশ্রেষ্ঠকে আমি জানি, তিনি ভ্রান্ত নহেন, প্রবণােকও নহেন, তাঁহার কথাটী প্রকৃত। বিধবাবিবাহ সনাতন হিন্দশাস্ত্রে নিষিদ্ধ নহে। আমার পরম সহৃদ রমাপ্রসাদ সরস্বতীরও এই মত, তিনিও তাঁহার মত প্রকাশ করিয়া তোমাকে আশ্বস্ত করিবেন। শরতের মাতা । পিতা, আপনার অনাথা কন্যাকে যে শাস্তিদান করিলেন, জগদীশ্বর তত্তজন্য আপনার মঙ্গল করিবেন। আমি শাস্ত্রের কথা আর জিজ্ঞাসা করিব না, সামাজিক রীতির কথাও জিজ্ঞাসা করিব না। তবে ভগবানের নয়নে কাজটী ভাল কি মন্দ, এই একটী কথা জানিতে বাসনা করি। আপনারা দুইজন পণ্ডিত আছেন, একটী উত্তর দিয়া বিধবাকে শান্তি দান করন । রমাপ্রসাদ সরস্বতী। মা, যিনি জগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত, তিনিও এ কথার উত্তর দিতে অক্ষম, এ হীনবদ্ধি কিরাপে ইহার উত্তর দিবে ? জগদীশ্বরের অভিপ্রায় অণুমাত্রও জানিতে পারে, মনষ্যের এরপে ক্ষমতা নাই। তবে যিনি করুণাময়, তিনি বালবিধবাকে চিরবৈধব্য যন্ত্রণা সহ্য করিবার জন্য সম্মিট করিয়াছেন, এরপে আমার ক্ষুদ্র বৃদ্ধিতে অনুভব হয় না। সরস্বতী ঠাকুরের স্থির, গম্ভীর, পণ্যময় কথাগুলি সেই ক্ষুদ্র কুটীরে শদিত হইতে লাগিল। সরস্বতী ঠাকুর কে ? ত্রিংশ পরিচ্ছেদ ঃ পরিশিষ্ট বৈশাখ মাসে তালপুকুর গ্রামে আমরা প্রথমে হেমচন্দ্র ও তাঁহার পরিবারের সহিত আলাপ করিয়াছিলাম। তাঁহারা আমাদের এক বৎসর মাত্র পরিচিত হইলেও বড় স্নেহের পাত্র। পনরায় বৈশাখ মাস আসিয়াছে, চল তাঁহাদের সেই তালপুকুর গ্রামের বাটীতে যাইয়া বিদায় লই । হেমের কিছর হইল না, তাঁহার দারিদ্র্য ঘুচিল না। তিনি বৎসর যাবৎ কলিকাতায় থাকিয়া পুনরায় চাষবাস দেখিবার জন্য ফিরিয়া আসিলেন। চন্দ্রনাথবাব তাঁহাকে হাইকোটে কোনও একটী কাৰ্য্য দিবার জন্য বন্দোবস্ত করিয়াছিলেন। মাজি"তবুদ্ধি যবেক মাত্রই এমন সুবিধা পাইলে আপনার বিশেষ উন্নতিসাধন করিতে পারিতেন। কিন্তু হেমের বৃদ্ধিটা তত তীক্ষ্য নহে, বৃদ্ধিটা কিছয় পাড়াগেয়ে, সতরাং তিনি সে কাৰ্য্য না লইয়া পাড়াগাঁয়ে ফিরিয়া আসিলেন। শরৎ তাঁহাকে কলিকাতায় আর কয়েক মাস থাকিতে অনেক জেদ করিয়াছিলেন ; হেম বলিলেন, না শরৎ, কলিকাতা নগরী যথেস্ট দেখিয়াছি, আর দেখিতে বড় রাচি নাই । বিন্দ পাববিৎ কচি অীবের অম্বল রধিতে তৎপর, এবং এক্ষণে সে রন্ধনকায্যের একটী সুবিধাও হইয়াছিল। বিন্দর জ্যেঠাইমার উমা ভিন্ন আর সন্তানাদি ছিল না : উমার মৃত্যুর পর তাঁহার জীবনে বিশেষ সুখ ছিল না; তিনি প্রায়ই দুই প্রহরের সময় বিন্দর বাটীতে আসিতেন । বিন্দর বাড়ীর রকে তিনি পা মেলাইয়া বসিতেন, বিন্দর ছেলেগুলিকে লইয়া খেলা করিতেন, অথবা সনাতনের গহিণীর সহিত বসিয়া গল্প করিতেন, সেও বিন্দরে জ্যেঠাইমার চুলের সেবা করিত। আর বিন্দন (আমাদের লিখিতে লুজা হইতেছে) সমস্ত দই প্রহর বেলা লুউশাক বিন্দ মেয়েট ভাল বটে, কিন্তু বৃদ্ধিসদ্ধি কখনও পাকিল না। , তারিণীবাবর একমাত্র কন্যা মরিয়াছে, তাহাতে তিনি একটা শোক পাইয়াছিলেন বটে, কিন্তু তিনি বিষয়ী লোক, শীঘ্রই সে শোক ভুলিলেন। তাঁহার কাৰ্য্যেও বিশেষ উৎসাহ ছিল. 888 ജൂ