পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৪৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী ফিরিতেছে, নিলাজ হইয়া খল খল করিয়া হাসিতেছে,-যেন একটী বিশাল তমালবক্ষের চতুদিকে ময়না পাখিগলি উড়িতেছে! কোনও মেয়েট ডিঙ্গি মারিয়া তারিণীবাবরে থলথলে কাণটী একবার মলিয়া দিল। কেহ বা সেই প্রকাণ্ড উদরের উপর দৈয়ের হাতের ছাপ লাগাইয়া গেল! এবং কোন রসিকা সেই বিশাল পাঠদেশে আলপনার দাগ দিয়া যেন দুরবিলম্বী মেঘরাশির উপর বিদ্যুতের শোভা করিয়া দিল। - ক্ষুদ্র গোপীকে পিড়ায় বসাইয়া বরের চারিদিকে সাত বার পাক দেওয়া হইল, তারিণীবাবর মনটি নত্য করিতেছে, নজরটি সেই পি ড্রার সঙ্গে সঙ্গে ফিরিতেছে! যখন “বর বড় না কনে বড়” প্রশন হইল, তখন গোপীর পরম বন্ধনগণও স্বীকার করিল, বর বড় বটে। যখন বরণডালা লইয়া পতিপত্রবতী কোনও গহিণী নাজির মহাশয়কে “ভ্যা” করিবার অনুরোধ করিলেন, তখন রসিকাগণ কাণাকাণি করিতে লাগিল—“ভ্যা” করিবেন দিন কতক পর—গোপী তেমন মেয়ে নয় ! তাহার পর বরকন্যা একত্র বসিলেন, পরোহিত মন্ত্রপাঠ করাইলেন। তারিণীবাব বেদপণ স্থলহস্তে কন্যার সেই সচিক্কণ সন্দের পতপবিনিন্দিত হস্তগ্রহণ করিয়া রোমাঞ্চিত হইলেন,— অবগুণ্ঠনশন্যে বধরে মুখ, মুক্তাবিভূষিত ললাট, এবং অলক্তকরঞ্জিত ওঠ দেখিয়া—বড়ো বুঝি বিবাহ-সভায় মছা যায়! তাহার পর বাসরঘর ! বাসরঘরে আজ বড় তামাসা,—তারিণীবাবর মত নাদোস নোদোস, ' গোলগাল, বয়স্ক, রসিক বর তালপুকুরের সন্দেরীগণ সব্বদা পান না, আজ বুঝি বরকে আস্তই খেয়ে ফেলেন ! বর ঘরে আসিবামাত্র এক জন শ্যামা, স্থলাঙ্গিনী, মধ্যবয়স্কা রসিকা তাঁহার হাত ধরিয়া বসাইয়া বলিলেন, “এস এস গোপীবল্লভ এস, তোমার বিরহে গোপবালা যে একেবারে শুকিয়ে গিয়েছে।” রসিক তারিণীবাব ঘরের চারিদিকে চাহিয়া দেখিলেন, একজন নয়, যেন ষোল শত গোপিনী সেই নিকুঞ্জে বসিয়াছেন! বাসরঘরের রং তামাসা আমরা কেমন করিয়া বর্ণনা করিব ? বাসরঘরের কথা আমরা কি জানি ? কোথা গেলে রসিকা সুন্দরীগণ,—তোমরা সে গঢ় আচার জান, তোমরা সে রসের কথা জান—তোমরা যাহা করিবার কর। গোবদ্ধন পৰ্বতের তারিণীবাবর কোলে ময়না পাখিটীর ন্যায় কন্যাটিকে বসাও, আমরা বিদায় হইলাম । সপ্তম পরিচ্ছেদ : দলপতি-প্রণয় সখের সবপ্নের মত তারিণীবাবর ছয়টি ফরাইল, তিনি পনরায় বদ্ধমানে কায্যে যোগ দিলেন। মধ্যে মধ্যে গ্রামে আসিয়া নববধটিকে দেখিয়া জীবন সাথক করিতেন, আবার অনিচ্ছকে বলদের মত ফিরিয়া বদ্ধমানে যাইয়া আপিসের ঘানিগাছে বাঁধা হইয়া ঘুরিতেন। তিন চারি বৎসর এইরপে কাটিয়া গেল। তারিণীবাবরে কায করা আর পোষায় না। বয়সে শরীর দাবাল হয়, মন নিস্তেজ হয়। কাযে সব্বদাই ভুল হইত। সাহেবেরা অতিশয় বিরক্ত হইয়া বলিতেন, নাজিরবাবর পঞ্চান্ন বৎসর বয়স হইয়াছে, পেনশন লউক । অন্যান্য আমলাগণ কাণাকাণি করিত, নাজির মহাশয়ের মন নতন বৌয়ের দিকে পড়িয়া রহিয়াছে, কাজ করিবেন কিরাপে ? চাকরীর মায়া শীঘ্র ছাড়া যায় না,--অনেক গঞ্জনা সহ্য করিয়াও আরও এক বৎসর কার্য করিলেন, শেষে অগত্যা পেনশন লইয়া গ্রামে আসিয়া বসিলেন। তখন গোপবালার চতুর্দশ বৎসর বয়স, যৌবনের কাস্তিতে শরীর ফেটে পড়িতেছে, রাপে ঘর আলো করিয়াছে, গা ভরিয়া গহনা পরিয়া রপোভিমানী গহিণী গহ জমকাইয়া বসিয়াছে! বাদ্ধক্যে রপে-তৃষ্ণাত্ত তারিণী বাব মনে করিলেন, "চাকুরীর মুখে আগন, এবার নববধকে লইয়া জীবন সাথক করিব।” নববধ মনে করিলেন, "এবার বড়ো মিনষেকে ঘরে পাইলাম, নাকে দড়ী দিয়া ঘরাইব, কত্তাটী আর যাবেন কোথা ?” উমার মা রোগক্লিস্টা, সংসার দেখিতে পারেন না, দুবেলা দপেট খান, আর প্রায়ই আপনার , ঘরে শইয়া থাকেন। বিন্দ সব্বদাই জোঠাইমাকে দেখিতে যাইত, কিন্তু নববধ তাহাতে মাখ ভার করিলেন । লোকের কাছে বলিতেন, “ওদের জাত গিয়াছে, ওদের আচার ব্যবহার ভাল নয়, 880