পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब्रटभय ब्रध्माबलौ আর কিছুই নাই। সুরেন্দ্রনাথ রুদ্রপরে গ্রামে মন্দির নিম্মাণ করিয়া দিলেন, এবং সেই অবধি মহাশ্বেতা ও তাঁহার কন্যা তথায় থাকিতেন। * যে সময় সুরেন্দ্রনাথ চন্দ্রশেখরের নিকট গিয়াছিলেন, তখন তাঁহার ছদ্মবেশ, তখনই তিনি ইন্দ্রনাথ নাম ধারণ করিয়াছিলেন। ছদ্মবেশেই তিনি দেশে দেশে অনুসন্ধান করিয়া মহাশ্বেতার সাক্ষাৎ পাইয়াছিলেন, ছদ্মবেশেই তাঁহার সহিত সেই নিস্তব্ধ আশ্রমে সরলার প্রথম সাক্ষাৎ হয়। ইচ্ছামতী-তীরে কতবার তিনি বালিকাকে খেলা দিয়াছেন; কতবার তাহাকে গল্প বলিয়াছেন, কতবার তাহাকে ক্রোড়ে করিয়া চুম্বন করিয়াছেন। এইরুপে ছয় বৎসর পর্য্যন্ত ইন্দ্রনাথ ও সরলার মধ্যে সোদর সোদরার প্রেম জন্মিয়াছিল। তাহা ভিন্ন অন্য কোন প্রকার ভাব অন্তরে উদয় হইয়াছে, তাহা অদ্যকার এই পণিমার রজনীর পবে কেহই জানিতে পারেন নাই। রজনী দ্বিপ্রহরের সময় মহাশ্বেতা পজা সমাধা করিয়া গহে আসিলেন। ইন্দ্রনাথ তাঁহার নিকট বিদায় লইবার জন্যই অপেক্ষা করিতেছেন। ইন্দ্রনাথ বললেন,— আপনি যে দঢ় ব্রত অবলম্ববন করিয়াছেন, তাহাতে সতীশচন্দ্রের নিধন সাধন না করিলে বোধ হয়, আপনার কন্যার পাণিগ্রহণ করিতে পাইব না। মহাশ্বেতা। পাইবে না। ইন্দ্রনাথ। আশীব্বাদ করন, আমি অদ্যই সেই অভিপ্রায়ে যাত্রা করিতেছি। আশীব্বাদ করুন, অবশ্যই মনোরথ সিদ্ধ হইবে। মহাশ্বেতা। আশীব্বাদ করিতেছি, দেবদেব মহেশ্বর তোমার যত্ন সফল করন। কিন্তু তুমি বালক, সেই চতুর বৃদ্ধিকুশল দেওয়ানকে কিরাপে পরাস্ত করিবে, আমার বৃদ্ধির অগোচর। ইন্দ্রনাথ। অধনা আমারও বৃদ্ধির অগোচর, দেখা যাউক কি হয়। মহাশ্বেতা। অবশ্যই তোমার জয় হইবে,—ধমের যদি জয় না হয়, তবে এ সংসার ছারখার হইবে, কেহ আর ভগবানের আরাধনা করিবে না। ইন্দ্রনাথ ক্ষণেক চিন্তা করিয়া বলিলেন,—ধমের যদি সব্বদা জয় হইত, তবে আপনার স্বামী নিধন প্রাপ্ত হইতেন না, সতীশচন্দ্রও বঙ্গদেশের দেওয়ান হইতেন না, মানবজাতি কখন ধৰ্ম্মম পথ পরিত্যাগ করিত না। যখন চারিদিকে পাপের গৌরব দেখিতেছি: যখন অত্যাচারী ও কপটাচারিগণ ধন, মান, ঐশ্বৰ্য্য লাভ করিতেছে; যখন পরমধ্যমিক, পবিত্নচেতা, পরোপকারিগণ নিপীড়িত ও পদদলিত হইতেছেন; তখন আর সংসারের ছারখার হইবার বাকী কি ? যদি সদাই ধমের জয় থাকিত, তাহা হইলে পাতক ও কপটাচরণ এ সংসার হইতে একেবারে দরেীভূত হইত। তথাপি কেন যে অধমের জয় হয়, কে বলিবে ? ভগবানের লীলাখেলা কে বুঝিতে পারে ? পরে মহাশ্বেতা বিশ্বেশ্বরী পাগলিনীর কথা ইন্দ্রনাথকে বলিলেন। ইন্দ্রনাথ বিস্মিত হইয়া বলিলেন,—এই পাগলিনী মানুষী, কি যোগিনী, কি প্রেতকন্যা, বুঝিতে পারি না, কিন্তু তাহার কথা কখনও মিথ্যা হয় নাই । মহাশ্বেতা । কখনও মিথ্যা হয় নাই। আমার স্বামীর মৃত্যুর পাবে আমাকে ভবিষ্যৎ গণিয়া বলিয়াছিল। আমি সবামীকে সবিশেষ অবগত করাইয়া সপরিবারে পলাইবার উপদেশ দিলাম। সেই বীরপরষে যে উত্তর দিলেন, তাহা আমার সমতিপথে অদ্যপি জাগরিত রহিয়াছে। বলিলেন,—ঘোর সংগ্রামস্থলে হিন্দ কি মুসলমান, মোগল কি পাঠান, কেহ কখন সমরসিংহকে পলায়ন করিতে দেখে নাই—আজি পামর সতীশচন্দুের ভয়ে পলায়ন করিব ? মরিতে হয় মরিব, যোদ্ধার তাহাতে ভয় কি ? 評 ইন্দ্রনাথ বলিলেন,—সেইবার ভিন্ন আরও দুই তিন বার ঐ পাগলিনী যে যে কথা বলিয়াছে, তাহা সত্য হইয়াছে। আমার পরামশে আপনাদিগের এই গ্রাম হইতে পলায়ন করা ভিন্ন উপায়ন্তর নাই। মহাশ্বেতা চিন্তা করিতে লাগিলেন। উক্ত পাগলিনী দুই তিন বার এই প্রকার সহসা দেখা দিয়া যে যে ভবিষ্যৎ কথা বলিয়াছিল, কখনও মিথ্যা হয় নাই। তিনি অস্তরে নিশ্চয় জানিলেন যে, সেই পামর সতীশচন্দ্র আবার সমরসিংহের নিরাশ্রয় বিধবার অনিস্টচেস্টা করিতেছে, পাগলিনী মানুষী হউক বা প্রেতকন্যা হউক, জানিতে পারিয়া সতক কারকর জন্য আসিয়াছিল। অনেকক্ষণ চিন্তা করিয়া বলিলেন,—অদ্যই পলায়ন করা শ্রেয়ঃ, উপায়ান্তর নাই। `్స8