পাতা:রাজমালা - ভূপেন্দ্রচন্দ্র চক্রবর্ত্তী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
রাজমালা
 
১২৯

উদয়পুর অধিকার ও
অমরমাণিক্যের মৃত্যু

হয় তাহাতে প্রচুর রক্তপাতে যুবরাজ অবসন্ন হইয়া পড়েন। হাতীর উপর হইতে তাঁহাকে নামাইয়া শিবিরে আনা হয়। আঘাত এত গুরুতর হইয়াছিল যে একমাত্র কপালে রাজযোগ ছিল বলিয়াই সে যাত্রা তিনি টিকিয়া গেলেন। অমরদুর্লভ মঘের দুর্ব্বার স্রোত রোধ করিতে পারিলেন না। সুতরাং ত্রিপুর সৈন্য ভীষণ ভাবে পরাজিত হইল। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধে মারাঠারা যেরূপ দুর্ব্বল হইয়া পড়িয়াছিল এই মঘসমরেও ত্রিপুরশক্তি অত্যন্ত হীনবল হইয়া পড়িল।

 ভগ্নদূত মুখে এই সংবাদ পাইয়া অমরমাণিক্যের দুঃখের সীমা রহিল না—একে পুত্রশোক তদুপরি ত্রিপুর বাহিনীর শোচনীয় পরাজয়ে তাঁহার মাথায় যেন আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। কিন্তু বসিয়া থাকিবার উপায় নাই, যে অসি সাহায্যে তিনি সিংহাসন নিষ্কণ্টক করিয়াছিলেন সেই অসিতে ভর করিয়া শেষ ভাগ্য পরীক্ষার জন্য যুদ্ধ-যাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন। দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে কেবলি মনে পড়িতে লাগিল, তাঁহারি যে বাহুবলে ত্রিপুরা রাজ্য পূর্ব্বরাজাদের সময়ে সুরক্ষিত ছিল সে বাহুবলের কোথায় অভাব ঘটিল যে ত্রিপুরা রাজ্য টলমল করিতেছে!

 ভগ্নহৃদয়ে মহারাজ চট্টল শিবিরে পৌঁছিলেন। রাজধর পিতার চরণে লুটাইয়া নিবেদন করিলেন যে যুঝার হঠকারিতাই যুদ্ধে হারিবার প্রধান কারণ, যুঝা কাহারও নেতৃত্ব মানিবার পাত্র নহেন, নিজের বুদ্ধিতে কায করায় সমস্তই পণ্ড হইয়াছে।