বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমোহনের স্ত্রী
৫৯

মস্তক অবনত করিয়া সে নিজের উদ্গত অশ্রুর বন্যা লুকাইতে লুকাইতে বলিয়া উঠিল, মাধব, তুমি আমাকে গালাগালি দাও, ধিক্কার দাও, আমার শিক্ষা হোক। আমি পাপী, পাপ করেছি, আমার ঈশ্বরের কাছে আমি অপরাধী এবং এই পৃথিবীতে যে আমার ঈশ্বর—আমাকে বলতে দাও মাধব, সেই তোমার কাছেও অপরাধ করেছি। আমি নিজেকে নিজে যতটা ঘৃণা করছি, তার চাইতে বেশি ঘৃণা তুমি আমাকে করতে পারবে না। ঈশ্বর জানেন, এই কবছর আমি কত সহ্য করেছি। বুক চিরে যদি দেখাতে পারতাম, দেখতে আমার বুকে কি হচ্ছে।

 মাধব কাঁদিল। কাঁদিয়া বলিল, মাতঙ্গিনী—প্রিয়—। মাধব আর বলিতে পারিল না, তাহার কণ্ঠ রুদ্ধ হইল।

 —বল বল মাধব, আবার বল, যে কথা শুনবার জন্যে আমার হৃদয় এতকাল প্রতীক্ষা ক’রে আছে, আর একবার সেই কথা বল। তুমি কি তবে আমাকে এখনও ভালবাস? একটি বার মাত্র এ কথা বল, শুনে আজ রাত্রেই আমি হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করব।

 মাধব নিজেকে সংঘত করিবার বৃথা চেষ্টা করিতে করিতে বলিল, মাতঙ্গিনী শোন, আমাকে ক্ষমা কর। এ দারুণ দুঃখ আর সইতে পারি না। তোমাদের বাড়িতেই আমার মনে এই আগুন ধরেছিল—বোধ হয় দুজনকেই এতে পুড়ে মরতে হবে। তখন আমরা ছোট ছিলাম, চেষ্টা করলেও এ আগুন নিবত না—সেই সময়েই যখন আমরা কর্ত্তব্যের পথ থেকে একচুল বাইরে যাই নি, আজ বহুদিন ধরে ঘা গেয়ে খেয়ে হৃদয় কঠিন হয়েছে, এখনই কি আমরা ভুল করব? মন থেকে এই পাপ দূর ক’রে দাও মাতঙ্গিনী, এস আমরা পরস্পরকে ভুলে যাই, দূরে দূরে থাকি।

 মাধব দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিল।

 মাতঙ্গিনী সোজা হইয়া দাঁড়াইল—তাহার সমস্ত দেহ এক নূতন রূপে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। নিজের সঙ্গে কঠিন সংগ্রাম করিতে করিতে সে