মিলনের স্মৃতিটুকু তাহার মনকে ভরিয়া রাখিয়াছিল—বাড়িতে গেলে তাহারা কি ভাবে তাহাকে অভ্যর্থনা করিবে, তাহার স্বামী এই ঘটনার কথা জানিতে পারিলেই বা তাহার কতখানি বিপদ ঘটিতে পারে—এই সকল দুশ্চিন্তা সেই মিলন-দৃশ্যের স্পষ্টতাকে বিন্দুমাত্র ছায়াচ্ছন্ন করিতে পারে নাই; সেই স্মৃতিই তাহার মানস-চক্ষে কখনও উজ্জ্বল রঙে কখনও গভীর কালিমায় ফুটিয়া উঠিতেছিল। সে মাধবকে কথা দিয়াছে, সে ভুলিয়া যাইবে; কিন্তু মাধবের সান্নিধ্য ত্যাগ করিয়াই সর্ব্বপ্রথমে সে এই স্মৃতিরই পূজা করিতে লাগিল—মাধব যতগুলি কথা উচ্চারণ করিয়াছিল তাহার প্রত্যেকটি সে মনে করিয়া করিয়া তাহা লইয়াই স্বপ্নরচনা করিতে লাগিল, মাধবের প্রত্যেক অশ্রুবিন্দুর স্মৃতি তাহাকে পাগল করিতে লাগিল। এবং ক্ষণে ক্ষণে তাহার এই মনের উন্মাদনা কাটিয়া গিয়া নিজের অন্তরের পাপের স্মৃতি, সে যে দেবতাদের ও মানুষের ঘৃণ্য হইয়া উঠিয়াছে, এই কথা ভাবিয়া অভিভূত হইয়া পড়িল।
কিয়দ্দূর অগ্রসর হইতে না হইতে আকাশ ক্রমেই কালো মূর্ত্তি ধরিতেছে দেখিয়া তাহারা বুঝিতে পারিল যে, একটা ঝড় আসন্ন। সেই সুদীর্ঘ নীরবতা ভঙ্গ করিয়া করুণা বলিয়া উঠিল, ঠাকুরুণ, তাড়াতাড়ি চল, এখুনি ঝড় উঠবে, তার আগে বাড়ি পৌঁছতে হবে।
অন্যমনস্ক মাতঙ্গিনী উত্তর দিল, হ্যাঁ, তাই চল।
করুণার গতি দ্রুততর হইল, মাতঙ্গিনীও কোনও প্রয়োজনের বোধে নয়, শুধু তাহার দেখাদেখি দ্রুত চলিতে লাগিল।
করুণা বলিল, ওই দেখ গাছের পাতায় বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু হয়েছে—
তাই নাকি?—মাতঙ্গিনী এই প্রথম তাহার স্বপ্নলোক হইতে জাগরিত হইয়া কথা বলিল। পরক্ষণেই কান পাতিয়া শুনিবার জন্য দাঁড়াইয়া বলিতে লাগিল, না না, এ তো জলের ফোঁটার শব্দ নয়, তবে কি? মনে