বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:রাজমোহনের স্ত্রী.djvu/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৬
রাজমোহনের স্ত্রী

 কনক আগন্তুককে লক্ষা করিয়া বলিল, ওর দুঃখের কথা আর বলো না। হতভাগিনীকে ওর স্বামী ঘর থেকে বের করে দিয়েছে, এখন ও কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে তাই ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছে না।

 সুকীর মা বলিল, আরে ছ্যাঁ, এতেই কান্না! স্বামীস্ত্রীতে সকালে ঝগড়া করে, সন্ধ্যেয় আবার তাদের মিল হয়—এ তো সবাই জানে। এখন তার রাগ আছে, রাগ পড়লেই সে সেধে তোমাকে ঘরে নিয়ে যাবে। ছিঃ মা, এর জন্য কান্না কেন? জানিস কনক, আমার জামাই যথন শ্বশুর-ঘর করতে আসে, এমন একটা রাত যায় না; যখন আমার মেয়ের সঙ্গে সে ঝগড়া করে না। কিন্তু তাতে কি, তাই বলে, আমার মেয়েকে সে কোন ও স্বামীর চাইতে কম ভালবাসে না। এই গেলো বুধবারের কথাই ধর। জামাই তো এল চমৎকার একটা সোনার নথ নিয়ে—এমন নথ, তোকে কি বলব কনক—

 কনক কিন্তু সুকীর মায়ের জামায়ের মিষ্টি স্বভাবের পরিচয় সম্পূর্ণ করিতে দিল না, সে মাঝখানেই বলিয়া উঠিল, যা বলেছ ঠিক সুকীর মা, কিন্তু এ আলাদা ব্যাপার। রাজুদা আর একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চায়-সেই যে জঙ্গলবেড়ে থেকে সম্বন্ধ এসেছিল সেই মেয়ে। এখন বুঝতেই পারছ, একে বার বার এমনভাবে যন্ত্রণা সে দিচ্ছে কেন। এ আর স্বামীর ঘর করতে যাবে না, সুকীর মা। আর এমনভাবে কারও যাওয়া উচিতও নয়। সেখানে গেলে অপমান আর দুর্ব্বাক্য ছাড়া আর কিই বা জুটবে? এর জন্যে ফিরে যাবে ও! আবার এদিকে কোথায় যে যাবে তারও ঠিক নেই—হতভাগীর বাপের বাড়ি কাছে হ’লেও বা কথা ছিল, তারা তো আর ঠেলতে পারত না।

 সহৃদয়া বৃদ্ধা বলিয়া উঠিল, পোড়া কপালই বটে। তুই ঠিকই বলেছিস কনক, এমন হ’লে কিছুতেই আর ওর ফিরে যাওয়া উচিত নয়।