সুকীর মা যতক্ষণ তাহার সম্বন্ধে গল্প বলিয়া গেল, সে নীরবে বসিয়া শুনিল এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিনা প্রতিবাদে সুকীর মার প্রায় সকল কথাই মানিয়া গেল। মনে মনে সে ইহা স্থির করিয়া লইল যে, যদি প্রয়োজন হয়, যদি তাহাকে অধিক দিন ধরিয়া এই নবপরিচিতার দয়ার আশ্রয়ে থাকিতে হয়, তাহা হইলে ভবিষ্যতে কোনও সময়ে তাহাকে সব কথা খুলিয়া বলিলেই চলিবে—অবশ্য তাহার স্বামী যে হীনতার মধ্যে ডুবিয়াছেন, যতদূর সম্ভব সে সংবাদ গোপন করিয়াই চলিতে হইবে।
মথুরের স্ত্রী যথেষ্ট আন্তরিকতার সহিত তাহাকে গ্রহণ করিলেন; তাহার হৃদরের স্বতঃস্ফুর্ত্ত উদারতা, শুদ্ধমাত্র শুষ্ক ভব্যতা নয়, মাতঙ্গিনীর নিকট ইহা স্পষ্ট করিয়া দিল যে তিনি তাহাকে আশ্রয় দিতেছেন না, নিমন্ত্রণ করিয়া কাছে রাখিতে চাহিতেছেন। অবশ্য মাতঙ্গিনী এই বাড়ির একজন হইয়া যাইবার পূর্ব্বে আর একটি কাজ করিতে হইবে। মথুরবাবুর অনুমতি এ বিষয়ে আবশ্যক। স্বামীর নিকট এই অনুমতি প্রার্থনা করিবার অভিলাষে একবার এক মিনিট তাঁহাকে ভিতরে আসিবার অনুরোধ জানাইবার জন্য সুকীর মাকে সদরে পাঠাইলেন। বৃদ্ধ তখনও তাহার কন্যার স্বামী-সৌভাগ্য সম্বন্ধে বক্তৃতায় ক্ষান্ত দেয় নাই। স্বামীকে কি জন্য ডাকিতেছেন তাহা তিনি মাতঙ্গিনীর নিকট ভাঙিলেন না। কয়েক মিনিট পরে তাহার স্বামী কক্ষে প্রবেশ করিলেন, তিনি মাথার ঘোমটা টানিয়া দিলেন। মাতঙ্গিনীর পক্ষে আর সেখানে বসিয়া থাকা রীতিবিগর্হিত, সুতরাং সে কক্ষ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইল, কিন্তু তাহার পূর্ব্বেই গৃহস্বামীর অপলক চোখে পরিচয় ও বিস্ময়ের একটা দৃষ্টি সে যেন দেখিতে পাইল।