পাতা:রাজসিংহ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজসিংহ।

 যুবতীগণের হাসিবার কারণ, এক প্রাচীনা, কতকগুলি চিত্র বেচিতে আসিয়া তাঁহাদিগের হাতে পড়িয়াছিল। হস্তিদন্তনির্ম্মিত ফলকে লিখিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপূর্ব্ব চিত্রগুলি; প্রাচীনা বিক্রয়াভিলাষে এক একখানি চিত্র বস্ত্রাবরণ মধ্য হইতে বাহির করিতেছিল; যুবতীগণ চিত্রিত ব্যক্তির পরিচয় জিজ্ঞাসা করিতেছিল।

 প্রাচীনা প্রথম চিত্রখানি বাহির করিলে, এক কামিনী জিজ্ঞাসা করিল, “এ কাহার তসবীর আয়ি?”

 প্রাচীনা বলিল, “এ সাহজঁহা বাদশাহের তসবীর।”

 যুবতী বলিল, “দূর মাগি, এ দাড়ি যে আমি চিনি। এ আমার ঠাকুর দাদার দাড়ি।”

 আর একজন বলিল, “সে কি লো? ঠাকুরদাদার নাম দিয়া ঢাকিস্ কেন? ও যে তোর বরের দাড়ি।” পরে আর সকলের দিকে ফিরিয়া রসবতী বলিল “ঐ দাড়িতে একদিন একটা বিছা লুকাইয়াছিল—সই আমার ঝাড় দিয়া সেই বিছাটা মারিল।“

 তখন হাসির বড় একটা গোল পড়িয়া গেল। চিত্রবিক্রেত্রী তখন আর একখানা ছবি দেখাইল। বলিল এখানা জাহাঙ্গীর বাদশাহের ছবি।

 দেখিয়া রসিকা যুবতী বলিল “ইহার দাম কত?”

 প্রাচীনা বড় দাম হাকিল।

 রসিকা পুনরপি জিজ্ঞাসা করিল, “এত গেল ছবির দাম। আসল মানুষটা নুরজাঁহা বেগম কতকে কিনিয়াছিল?”

 তখন প্রাচীনাও একটু রসিকতা করিল; বলিল,

 “বিনামূল্যে।”