পাতা:রাজা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন হলে এই কথাটাই তাকে বলব যে, আমিই এসেছি, তোমার আসার অপেক্ষা করি নি। বলব, চোখের জল ফেলতে ফেলতে এসেছি— কঠিন পথ ভাঙতে ভাঙতে এসেছি। এ গর্ব আমি ছাড়ব না। সুরঙ্গমা । কিন্তু সে গর্বও তোমার টিকবে না । সে যে তোমারও আগে এসেছিল, নইলে তোমাকে বের করে কার সাধ্য । সুদৰ্শন । তা হয়তো এসেছিল— আভাস পেয়েছিলুম কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি। যতক্ষণ অভিমান করে বসেছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে— অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম তখনই মনে হল সেও বেরিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি। এখন আমার মনে আর কোনো ভাবনা নেই। তার জন্তে এত যে দুঃখ এই দুঃখই আমাকে তার সঙ্গ দিচ্ছে— এত কষ্টের রাস্তা আমার পায়ের তলায় যেন সুরে সুরে বেজে উঠছে— এ যেন আমার বীণা, আমার দুঃখের বীণা— এরই বেদনার গানে তিনি এই কঠিন পাথরে এই শুকনো ধুলোয় আপনি বেরিয়ে এসেছেন— আমার হাত ধরেছেন— সেই আমার অন্ধকার ঘরের মধ্যে যেমন করে হাত ধরতেন— হঠাৎ চমকে উঠে গায়ে কাটা দিয়ে উঠত— এও সেইরকম । কে বললে তিনি নেই ? সুরঙ্গম, তুই কি বুঝতে পারছিল নে তিনি লুকিয়ে এসেছেন ? সুরঙ্গমার গান অন্ধকারের মাঝে আমায় ধরেছ দুই হাতে। কখন তুমি এলে, হে নাথ, মৃদু-চরণপাতে ? ভেবেছিলেম, জীবনস্বামী, তোমায় বুঝি হারাই আমি— আমায় তুমি হারাবে না বুঝেছি আজ রাতে । > X o