পাতা:রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ.djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২
রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ।

যন্ত্রের শাসনার্থ তাড়াতাড়ি এক কড়া আইন প্রণয়ন করেন; এবং তদানীন্তন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা অনুমোদিত করাইয়া লন। যখন এই নুতন বিধি প্রণীত হয় তখন রামমোহন রায় মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা লোপ হইতেছে দেখিয়া স্বদেশবাসৗদিগকে এই নুতন রাজবিধির বিরুদ্ধে উত্থিত করিবার চেষ্টা করেন। তাহাতে অকৃতকার্য্য হইয়া অবশেষে তিনি ও দ্বারকানাথ ঠাকুর মিলিয়া বারিষ্টারের সাহায্যে, সুপ্রিমকোর্টে বিচার উপস্থিত করেন; এবং যাহাতে সুপ্রিমকোর্টের অনুমোদিত না হয় তাহার চেষ্টা করেন। সেখানে অকৃতকার্য্য হইয়া ইংলণ্ডাধিপতির নিকট এক আবেদন প্রেরণ করেন। কিছুতেই কিছু হয় নাই।

 তৎপরে লর্ড উইলিয়াম বেটিঙ্ক মহোদয় যখন রাজ্যভার গ্রহণ করেন, এবং ইংলণ্ডের কর্তৃপক্ষের আদেশানুসারে সাহসের সহিত সৈন্যবিভাগের বাটার হ্রাস করিতে প্রবৃত্ত হন, তখন ইংরাজগণের মধ্যে তুমুল আন্দোলন উঠে। বেটিঙ্ক ইংরাজগণের অপ্রিয় হইয়া পড়েন। ইংরাজ সম্পাদিত সংবাদপত্র সকল তাঁহার প্রতি অতি অভদ্র গালাগালি বর্ষণ করিতে আরম্ভ করে। সে সময়ে অনেকে বেটিঙ্ক মহোদয়কে মুদ্রাযন্ত্রের শাসনের জন্য পরামর্শ দিয়ছিলেন; কিন্তু তিনি তদনুসারে কার্য্য করেন নাই। তাঁহার বিশ্বাস ছিল যে, ভারতবর্ষের ন্যায় বহুবিস্তীর্ণ সাম্রাজ্যকে সুশাসন করিতে গেলে মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা একান্ত প্রয়োজনীয়। তিনি স্বাস্থ্যের হানিবশতঃ মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা দিয়া যাইতে পারিলেন না। সে কার্য্যের ভার তাঁহার পরবর্তী গবর্ণর জেনেরাল লর্ড মেটকাফের জন্য রাখিয়া গেলেন। যে আইনের দ্বারা মুদ্রাযন্ত্রকে স্বাধীন করা হয়, তাহা লর্ড মেকলে প্রণয়ন করিয়াছিলেন। লর্ড মেটকাফের প্রশংসার্থ একথা বলা আবশ্যক যে মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা প্রদান করাতে গবর্ণর জেনেরালের পদে প্রতিষ্ঠিত থাকা কঠিন হইবে, ইহা জানিয়াও তিনি ঐ সাহসের কার্য্যে অগ্রসর হইয়াছিলেন; এবং সত্যসত্যই তাহাই তাঁহার উক্ত পদে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকিবার পথে অন্তরায় স্বরূপ হইয়াছিল। মুদ্রযন্ত্রের স্বাধীনতা-প্রদ আইন ১৮৩৫ সালের এপ্রিল মাসে প্রণীত হইয়া ১৫ই সেপ্টেম্বর হইতে জারি হয়।

 মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা ঘোষণা হইলেই বঙ্গ দেশে এক নবযুগের সুত্রপাত হইল। নূতন নুতন সংবাদপত্র সকল দেখা দিতে লাগিল; নবপ্রাপ্ত স্বাধীনতার ভাব সর্বশ্রেণীর মানুষের মনে প্রবিষ্ট হইয়া চিন্তা ও কার্য্যে এক