SS রামমোহন-গ্ৰন্থাবলী অন্নেছুসেবী উভয়ের পরস্পর মান্যমানকতা কুটম্বতা আহার ব্যবহার দেখিতেছি। অতএব মেচ্ছাসেবী ব্ৰাহ্মণ দোষী হয় না এখন সৎকৰ্ম্মীরা বিবেচনা করিবেন যে এ মহাশয় নিশ্চিত ধৰ্ম্মসংহারক হয়েন কি না। ১৩ পৃষ্ঠের শেষে লিখেন যে “ব্ৰাহ্মণের শূদ্রমাত্রের সহিত একাসনে উপবেশন পাতিত্যজনক নহে যেহেতু অন্ত্যজ জাতি বৈষ্ণব হইলে সেও বিশ্বপবিত্ৰকারক হয়” এবং ইহার প্রমাণের নিমিত্ত ব্ৰহ্মপুরাণ, ব্ৰহ্মবৈবৰ্ত্তের বচন লিখিয়াছেন যে চণ্ডাল যবনাদিও বৈষ্ণব হইলে পবিত্রকারী হয় । উত্তর -যদ্যপি এ সকল মাহাত্ম্যসূচক বচনের যথাশ্রত অর্থকে ধৰ্ম্মসংহারকের মতানুসারে স্বীকার করা যায় তবে শূদ্র বৈষ্ণবের বরঞ্চ চণ্ডালাদি বৈষ্ণবেরও সহিত একাসনে বসিলে পাপের নিমিত্ত না হইয়া পবিত্রতার কারণ অবশ্য হয় ; কিন্তু এরূপ মাহাত্ম্যসূচক বচন শাক্ত শৈবাদির প্রতিও দেখিতেছি, যথা কুলাৰ্চনচন্দ্ৰিকাধুত কুলাবিলাতন্ত্রে ( কৌলিকো হি গুরু; সাক্ষাৎ কৌলিকঃ শিব এব চ। কৌলিকস্তু পিতা সাক্ষাৎ কৌলিকো বিষ্ণুরেব হি) কৌলিক সাক্ষাৎ গুরু ও শিব ও পিতা ও বিষ্ণুস্বরূপ হয়েন। মহানির্বাণ তন্ত্রে ( অহো পুণ্যতমাঃ কৌলাস্তীর্থরূপাঃ স্বয়ং প্ৰিয়ে। যে পুনন্ত্যাত্মিসম্বন্ধান্মোচ্ছশ্বিপচপামরান ) স্বয়ং তীৰ্থস্বরূপ কৌল সকল কি পুণ্যবন্ত হয়েন যাহারা আপন সম্বন্ধ দ্বারা মেচ্ছ চণ্ডাল পামর সকলকে পবিত্র করেন। কুলাৰ্ণবে ( শ্বপচােপি কুলভজ্ঞানী ব্ৰাহ্মণাদিতিরিচ্যতে। কোলজ্ঞানবিহীনস্তু ব্ৰাহ্মণঃ শ্বপচাধমঃ )। চণ্ডালও যদি কুলজন্তানী হয় তবে সে ব্ৰাহ্মণ হইতেও শ্ৰেষ্ঠ, ব্ৰাহ্মণ যদি কুলজন্তানহীন হয়েন তবে তিনি চণ্ডাল অপেক্ষাও অধম হয়েন। স্কন্দে ( শিবধৰ্ম্মপরা যে চ শিবভক্তিরতাশ্চ যে। শিবব্রতধরা যে বৈ তে সর্বে শিবরূপিণঃ) র্যাহারা শিবধৰ্ম্মানুষ্ঠানে রত ও শিবের ভক্ত এবং শিবব্রতধারী তাহারা সাক্ষাৎ শিবস্বরূপ হয়েন। অতএব এতদ্দেশের শূদ্র ও অন্ত্যজ সকলে প্ৰায় শাক্ত শৈব বৈষ্ণব এই তিন ধৰ্ম্মের এক ধৰ্ম্মাক্রান্ত হয়েন, আর প্রত্যেক ধৰ্ম্মবিশিষ্টের প্ৰতি ভুরি মাহাত্ম্যসূচক বচন দেখিতেছি যে র্তাহারা নিজে পবিত্র ও অন্যকে পবিত্র করেন এই রীতিক্রমে ধৰ্ম্মসংহারকের মতে কি শূদ্র কি অন্ত্যজ ইহাদের সহিত একাসনােপবেশনে ও ব্যবহারে কোনো দোষের সম্ভাবনা রহিল নাই, সুতরাং তঁাহার মতে শূদ্র ও চণ্ডালাদির বিষয়ে ব্ৰাহ্মণের প্রতি যে২ নিয়ম শাস্ত্ৰে কহিয়াছেন তাহার স্থল প্ৰায় এ দেশে প্রাপ্ত হয় না এবং শূদ্রাদির সহিত যেরূপ ব্যবহার লিখেন তাহারও প্ৰায় নির্বিষয়তপত্তি হইল অতএব সৎকৰ্ম্মীরা বিবেচনা করিবেন যে ধৰ্ম্মসংহীরকের এ ব্যবস্থা তাহদের গ্রহণযোগ্য হয় কি না ।