পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3br রামেন্দ্রম্বন্দর রচনাসমগ্র অঙ্গ হইতে জন্মিল। অরণ্য এবং গ্রাম্য পশুগণও উৎপন্ন হইল। ভাবী জীবগণের হিতার্থ বিরাট পুরুষ স্বয়ং এই যজ্ঞ করিয়াছিলেন—আপনাকে আহুতি দিয়া যজ্ঞ করিয়াছিলেন –ভাবী জীবেরা, ভাবী দেবগণ ও ভাবী ঋষিগণ, যজমান ও ঋত্বিক, হইয়া তাহার সহিত একযোগে তাহাকেই পশু করিয়া এই যজ্ঞের সম্পাদন করিয়াছিলেন। খ্ৰীষ্ট-যজ্ঞের কথাটা এই প্রসঙ্গে মনে রাখিবেন । ইহাই বিশ্বমধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম যজ্ঞ ; কেবল যজ্ঞের জন্যই, অন্য কামনা বর্জন করিয়া কেবল যজ্ঞের জন্যই এই প্রথম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হইয়াছিল। “যজ্ঞেন যজ্ঞমযজন্ত দেবা, তানি ধৰ্ম্মাণি প্রথমান্যাসন”—এখন যে যজ্ঞ করা হয়, সে সেই আদিম যজ্ঞেরই অনুকরণে । বিরাট, পুরুষের এই বিশ্বস্বষ্টিরূপ মহাযজ্ঞ ঋষিদিগের কল্পনাকে অভিভূত করিয়া-- ছিল। বিস্ময়ের সহিত প্রশ্ন করা হইতেছে,—“কালীৎ প্রম প্রতিমা কিং নিদানম্” —এই যে যজ্ঞ হইয়াছিল, ইহার পরিমাণ কি ছিল, প্রতিমা কি ছিল, উহার সঙ্কল্প কি ছিল ? “আজ্যং কিমাসীৎ পরিধিঃ ক আসীৎ, ছন্দঃ কিমাসীৎ প্ৰউগং কিমুক্‌থম্ ; যদু দেবা দেবম্ অযজন্ত বিশ্বে”—বিশ্বমধ্যে দেবতারা যজ্ঞ-পুরুষের যে যাগ করিয়াছিলেন, তাহার অাজ্য কি ছিল, পরিধি কি ছিল, ছন্দ কি ছিল, শস্ত্রই বা কি ছিল ? বলা হইতেছে, “যে যজ্ঞে বিশ্বতস্তস্তুভিস্তত একশতং দেবকৰ্ম্মেভিরায়তঃ”—বিশ্ব ব্যাপিয়া এই যে যজ্ঞরূপ বস্ত্র বয়ন করা হইতেছে, দেবগণের যাবতীয় কৰ্ম্ম তাহাতে তন্তুস্বরূপ হইয়াছে। “ইমে বয়ন্তি পিতরে আী যজুঃ, প্র বয় অপ বয় ইত্যাসতে ততে”—সম্মুখের দিকে বয়ন কর, বিস্তারের দিকে বয়ন কর বলিতে বলিতে পিতৃগণও আসিয়া সেই বয়ন কার্য্যে যোগ দিতেছেন । “চা কপ্রে তেন ঋষয়োঃ, মনুষ্যা, যজ্ঞে যাতে পিতরো নঃ পুরাণে”—সেই পুরাতন যজ্ঞ সম্পাদিত হইলে তাহারই অনুকরণে আমাদের পিতৃগণ, মনুষ্যগণ এবং ঋষিগণ যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। “পশুন মন্তে মনসা চক্ষস তান, য ইমং যজ্ঞম্ অ্যজন্ত পূৰ্ব্বে”—পূর্বে র্যাহারা এই যজ্ঞ সম্পাদন করিয়াছিলেন, এখনও যেন মানস চক্ষে তাহাদিগকে দেখিতে পাইতেছি । বস্তুতই এই স্বষ্টিযজ্ঞ কখনও সমাপ্ত হইবার নহে। কাল ব্যাপিয়া ইহা চলিতেছে। সমস্ত জাগতিক ব্যাপার এই যজ্ঞকৰ্ম্মের অঙ্গস্বরূপ। দেবগণ, পিতৃগণ এবং নরগণ এই যজ্ঞব্যাপারেই লিপ্ত রহিয়াছেন ; এই স্বষ্টিযজ্ঞে সাহায্য করিবার জন্যই তাহারা নিযুক্ত রহিয়াছেন। র্তাহাদের অস্তিত্বের আর কোন সার্থকতাই নাই। স্বষ্টিকর্তা বিরাট পুরুষ স্বয়ং এই যজ্ঞে আত্মাহুতি দিয়াছেন। সেই মুক্ত পুরুষই স্বেচ্ছায় আপনাকে যুপে বদ্ধ করিয়া আপনাকে যজ্ঞীয় পশুতে পরিণত করিয়াছেন ; তাহার দেহকে খণ্ড খণ্ড করিয়া বিশ্বজগতের নিৰ্ম্মাণ করিতেছেন । সমস্ত বিশ্বজগৎটাই সেই যজ্ঞীয় পশুর দেহ ; যাবতীয় জীবের হিতার্থ ইহা যজ্ঞে নিযুক্ত হইয়াছে। যাবতীয় জীবের পক্ষে ইহা ভোগ্যরূপে—অন্নরূপে নিদিষ্ট রহিয়াছে। যাবতীয় জীব হবিঃশেষরূপে ইহাকে আত্মস্থ এবং আত্মসাৎ করিয়া সেই বিরাট পুরুষের শরীরে আপনার শরীর মিশাইতেছে। বিরাট পুরুষ কেবলই আপনাকে ত্যাগ করিতেছেন, কেবলই আপনাকে নষ্ট করিতেছেন, কেবলই আপনাকে নিহত করিতেছেন ; অথচ তিনি নষ্ট—নিহত হইতেছেন না। তাহার এই যে সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ, তাহা এক