পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ রামেন্দ্র সুন্দর রচনাসমগ্র স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করিতেন। এই স্বাতন্ত্রাইদ্বিজাতি-সমাজের সঙ্কীর্ণতা। অন্য সমাজের লোক সহজে দ্বিজাতি-সমাজে প্রবেশ করিতে, অর্থাৎ দ্বিজাতিগণের বিশিষ্ট অধিকার লাভ করিতে পাইত না । একবারেই যে পাইত না, ইহা মনে করিতে পারি না । ইতিহাসে দেখিতে পাই, বহু অনার্য্য এবং বহু ম্লেচ্ছ পর্য্যন্ত কালক্রমে দ্বিজাতি সমাজে প্রবেশ পাইয়াছে এবং দ্বিজাতির সকল অধিকার লাভ করিয়াছে। পক্ষান্তরে অনেক খাটি দ্বিজ স্বেচ্ছাক্রমে দ্বিজাতির অধিকার ত্যাগ করিয়া শূদ্রত গ্রহণ করিয়াছেন। আজি তাহারা সেই শূদ্রত স্বীকারের জন্য অতুতপ্ত এবং পুনরায় দ্বিজত্বলাভের জন্য ব্যাকুল । তৎসত্ত্বেও বলিতে পারা যায়, আজ পর্য্যস্ত ভারতবর্ষে দ্বিজাতি-সমাজ অন্যান্য সমাজ হইতে কতকটা স্বতন্ত্র রহিয়াছে। বেদে অধিকার লষ্টয়াই এই স্বাতন্ত্র্য । যে ব্যক্তি দ্বিজ, সে যে বর্ণের লোকই হউক না, বেদের আলোচনায় এবং বেদ-বিহিত কৰ্ম্মে তাহার যোল আনা অধিকার আছে। যাহারা গোড়া হইতেই শূদ্র বলিয়া গণ্য আছে, অথবা দ্বিজত্ব ত্যাগ করিয়া শূদ্রত লইয়াছে, তাহারা এখন বেদপন্থী সমাজের অন্তর্গত থাকিলেও বেদের আলোচনায় এবং বৈদিক কৰ্ম্মানুষ্ঠানে ষোল আনা অধিকার পায় নাই । এখন এই দ্বিজ শব্দটির তাৎপৰ্য্য বুঝিবার চেষ্টা করা যাক । - আজকাল বিদ্যার্জনের নামান্তর—লেখা পড়া শেখা। এ কালে প্রচুর পরিমাণে কালি কলম খরচ করিয়া লেখা অভ্যাস করিতে হয় এবং পুথিপত্রের সাহায্যে পড়া অভ্যাস করিতে হয়। এইরূপ লিখিতে এবং পড়িতে শিখিলে তবে বিদ্যা লাভ হয়। আমি যে সময়ের কথা বলিতেছি, তখন লিপির আবিষ্কার হয় নাই । অতএব তখন লেখা ও ছিল না, পড়াও ছিল না । লেখা পড়া ছিল না, কিন্তু বিদ্যা ছিল। বিদ্যালাভের জন্য লেখা এবং পড়া একান্ত আবশ্বক, তাহা বোধ করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ও বলিতে কুষ্ঠিত হইবেন । অন্ততঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের Faculty of Science বলিতে কুষ্ঠিত হইবেন । লেখা পড়া ব্যতীতও বিদ্যালাভ হইতে পারে। ভারতবর্ষে ও এক সময়ে বিদ্যা ছিল এবং বিদ্যা অজ্জনের ব্যবস্থাও ছিল । বেদপন্থী সমাজের সেই অতি প্রাচীন বিদ্যার নামই বেদ । ইতিহাস আলোচনা করিলে দেখা যাইবে, সেই অতি প্রাচীন বেদবিদ্যা হইতেই এ দেশের প্রায় যাবতীয় বিদ্যা উৎপন্ন হইয়াছে । দ্বিজাতিসমাজের প্রত্যেক বালককে এক সময়ে সেই বেদবিদ্যার অন্ততঃ কিয়দংশ অর্জন করিতে হইত। প্রত্যেক বালককে এই জন্য বিদ্যাদাতা আচার্য্যের সমীপে যাইতে হইত। আচার্য্যের সমীপে যাওয়ার নাম উপনয়ন । এই উপনয়নব্যাপার এ কালের পাঠশালায় ভত্তি হওয়ার অনুরূপ। কয়েক বৎসর আচার্য্যের বাড়ীতে বাস করিয়া আচার্য্যদত্ত বেদ-বিদ্যা গ্রহণ করিয়া , আচার্য্যের অতুমতি লইয়া বাড়ী ফিরিতে হইত। এই বাড়ী ফেরার নাম সমাবর্তন । এই সমাবৰ্ত্তন-ব্যাপার কতকটা এ কালের পাশের সাটিফিকেট লষ্টয়া বাড়ী ফেরার অনুরূপ। এই সমাবর্তনের পর অর্থাৎ মাষ্টার মহাশয় দত্ত সার্টিফিকেট পাওয়ার পর, গৃহী হইবার অধিকার জন্মিত। আমাদের ধৰ্ম্মশাস্ত্র এ সম্বন্ধেও একটা থিয়োরি খাড়া করিয়া ফেলিয়াছিলেন । তখনকার বেদবাক্যের নামাস্তুর ছিল ব্রহ্ম। ব্ৰহ্ম শব্দের অর্থই বেদবাক্য । আচাৰ্য্য