পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

X e রামেওদ সুন্দর রচনাসমগ্র ব্ৰহ্মবাদীদের মধ্যেও প্রচুর মতভেদ ছিল। একই অচষ্টানের তাৎপৰ্য্য সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মত ছিল। অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিধিনিষেধেরও ভিন্নতা ছিল । অথচ প্রত্যেকের উক্তিই বেদবাক্য । এই বেদবাক্যের সামঞ্জস্য সাধন করিবার জন্য পরবর্তী পণ্ডিতদিগকে মাথা ঘামাইতে হইয়াছিল। পরস্পরবিরোধী বিধিনিষেধ-বাক্যের কোনরূপ সামঞ্জস্য সাধন না করিলে সামাজিক লোক কোন পথে চলিবে ? এই সামঞ্জস্ত সাধনের জন্য বেদবাক্যের তাৎপর্য্য নির্ণয় করিয়া কৰ্ম্মমীমাংসার জন্য দর্শনশাস্ত্রের একটা বিপুল শাখার স্মৃষ্টি হইয়াছিল। মীমাংসাদর্শন বলিলে আমরা এই দর্শনকেই বুঝি। পরস্পরবিরোধী বেদবাক্যের সামঞ্জস্য সাধনের জন্য মীমাংসাদর্শন যে সকল rule বা canon প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, সমস্ত বেদপন্থী সমাজ তাহ মানিয়া লইয়াছে । আমাদের সমাজে প্রচলিত Jurisprudence এর ভিত্তিপত্তন ঐখানে। কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে কৰ্ত্তব্য বিষয়ে সংশয় উপস্থিত হইলেই মীমাংসাদর্শনের দোহাই দিতে হয়, এবং মীমাংসাদর্শনের সূত্রগুলির প্রয়োগ করিয়া কৰ্ত্তব্য নির্ণয় করিতে হয় । সকল দেশে সকল সমাজে লোকস্থিতি কতকগুলি কত্রিম conventionএর উপর স্থাপিত। সামাজিক অনুষ্ঠানসকলের বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি যাহাই হউক, উহাদের ঐতিহাসিক ভিত্তি কাৰ্য্যতঃ কতকগুলি conventionএর উপর, কতক গুলা fictionএর উপর প্রতিষ্ঠিত হইয়া দাড়াইয়াছে। সমাজের অধিকাংশ লোকে যাহা মানিয়া লয়, তাহ বিজ্ঞানসম্মত হউক আর না হউক, তাহাঙ্গ সমাজ-ব্যবস্থার ভিত্তি । ব্যবহারশাস্ত্রবিদের অর্থাৎ আইনজ্ঞ পণ্ডিতের এই সকল fictionএর কথা বেশ জানেন । এ বিষয়ে আমার বাগ বাহুল্যের প্রয়োজন নাই । যজ্ঞের কথায় ফিরিয়৷ আসা যাক। 'যজ্ঞ’ শব্দটা কখন অতি সঙ্কীর্ণ এবং কখন অতি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হইত। যাজ্ঞিক পণ্ডিতেরা যজ্ঞ শব্দের একটা অর্থ দিয়াছেন । দেবতার উদ্দেশে কোনও দ্রব্য ত্যাগের নাম যজ্ঞ । এখানে তিনটি শব্দ পাওয়া যাইতেছে। দেবতা, দ্রব্য এবং ত্যাগ। এই তিনটি শব্দেরই সঙ্কীর্ণ পারিভাষিক অর্থ আছে, এবং অত্যন্ত ব্যাপক অর্থও আছে। অামি যজ্ঞের তাৎপর্য্য অন্বেষণে উপস্থিত হইয়াছি । সঙ্কীর্ণ এবং ব্যাপক উভয় অর্থই আমাকে গ্রহণ করিতে হইবে। প্রথমে সঙ্কীর্ণ অর্থই গ্রহণ করিব ; তার পর ক্রমশঃ ব্যাপক অর্থে আসা যাইবে । সঙ্কীর্ণ অর্থে দেবতা, দ্রব্য ও ত্যাগ বলিলে কি বুঝায়, স্কুলত: তাহা আপনার জানেন, বেদে নানা দেবতার উল্লেখ আছে। ইন্দ্র, অগ্নি, সোম, বিষ্ণু, রুদ্র ইত্যাদি। এই সকল দেবতার উদ্দেশে কোন-না-কোনও দ্রব্য ত্যাগ করা হইত। ত্যাগকৰ্ম্মের নাম আহুতি । যে দ্রব্য ত্যাগ করা হইত, তাহা হব্য । নানাবিধ দ্রব্য হব্যরূপে দেওয়া হইত। দুষ্টান্ত, আজ্য অর্থাৎ যজ্ঞার্থ সংস্কৃত, ঘৃত, চরু বা পায়সান্ন, দুধ, দই, পুরোডাশ বা রুটি, পশুমাংস, সোমলতার রস ইত্যাদি । এই দ্রব্য-ত্যাগকৰ্ম্মের নামই যাগ । যে গৃহস্থের হিতার্থে যাগ অতুষ্ঠিত হইত, তিনি যজমান । যিনি যজমানের হিতার্থে এই যাগকৰ্ম্ম সম্পাদন করিতেন, তিনি যাজক বা ঋত্বিকৃ। যাগকৰ্ম্মর প্রায় প্রত্যেক অনুষ্ঠানই মস্ত্রোচ্চারণপূর্বক করিতে হইত। প্রত্যেক কৰ্ম্মেরই নিদিষ্ট মন্ত্র ছিল। আগেই