পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যজ্ঞ-কথা : সোমযাগ (tV) একটি ঋকৃমন্ত্র,—অস্বাক্যামন্ত্র পাঠ করাই সাধারণ নিয়ম ; কিন্তু এই তিন আহুতিতে যাজ্যার পূৰ্ব্বে বহু ঋক্ৰমন্ত্র পড়িতে হয়। এই ঋক্সমূহের নাম শস্ত্র। ঐ সকল মন্ত্রে দেবতার শংসন বা প্রশংসা হয়, সেই জন্য মন্ত্রসমূহের নাম শস্ত্র। হোতা, মৈত্রাবরুণ, ব্রাহ্মণাচ্ছংসী এবং আচ্ছাবাক, এই চারি ঋত্বিকের শস্ত্রপাঠে অধিকার আছে। প্রত্যেক শস্ত্রপাঠের পূৰ্ব্বে উদগাত, প্রস্তোত, এবং প্রতিহর্তা, এই তিন জন সামগায়ী ঋত্বিক সাম গান করেন ; ইহার নাম স্তোত্রগান। আগে স্তোত্রগান, তার পর শস্ত্ৰপাঠ। সদ্যশালায় একটা ডুমুরের ডাল পোত থাকে, আগে বলিয়াছি—উহার নাম ঔদুম্বরী। স্তোত্রগানের সময় গায়কের ঔছুম্বরী স্পর্শ করিয়া গান করেন। স্তোত্রগানের এবং শস্ত্রপাঠের কতকগুলি খুটিনাটি নিয়ম আছে। যিনি শস্থ পাঠ করিবেন, তিনি আপনার ধিষ্ণের পাশে পূৰ্ব্বমুখে বসেন। আর যিনি আহুতি দিবেন, তিনি শস্ত্রপাঠককে পিছনে রাখিয়া দুই হাতে ও দুই পায়ে ভর দিয়া চতুস্পদের মত অগ্নির সম্মুখে বসিয়া থাকেন। শস্ত্রপাঠক প্রথমে “স্ব মৎ পদ বক্ দে পিতা মাতরিশ্বা” ইত্যাদি একটি মন্ত্র মনে মনে জপ করেন। তার পর তিনি আহুতিদাতাকে আহবান করিয়া আহাব মন্ত্র পাঠ করেন। প্রাতঃসবনের আহাব মন্ত্র “শোংসাবোম”। অর্থ, আমরা উভয়ে শংসন করি বা শস্ত্র পাঠ করি। আহুতিদাতা তাহার উত্তরে বলেন—“শংসামোদৈবোম্ব” অর্থাৎ তুমিই শংসন কর, তাহাতে আমোদ হইবে । এই উত্তরের নাম প্রতিগর। তাহার পর শস্ত্রপাঠক তুষ্ণীংশংস নামক আর একটি মন্ত্ৰ মনে মনে জপ করেন। প্রাতঃসবনে তুষ্ণীংশংস “ভূরগ্নির্জ্যোতির্জ্যোতিরগ্নিঃ”। তার পর শস্ত্রপাঠক শস্ত্রপাঠে প্রবৃত্ত হন। শস্ত্রের অন্তর্গত মন্ত্রগুলি ঋকৃমন্ত্র ; কিন্তু তাতিরিক্ত কতকগুলি যজুর্মন্ত্রও সেই সঙ্গে পড়িতে হয়। এইগুলির নাম নিবিৎ মন্ত্র । শস্ত্র পাঠের পর তিনি বলেন, “উকৃথং বাচি” ; অর্থাৎ আমার বাক্যে উকৃথ বা শস্ত্র পাঠ হইল। অধ্বযু তাহার উত্তরে বলেন, উকৃথশাঃ যজ সোমস্ত”—উকৃথ পাঠ হইয়াছে, এখন সোমাহুতির যাজ্য পাঠ কর। অধ্বযু্যর এই আদেশ পাইয়া শস্ত্রপাঠক যাজ্য পাঠ করেন। “যে যজামহে” বলিয়া যাজ্য পাঠ আরম্ভ হয়, তাহার পর বৌষটু উচ্চারণ করিতে হয় । অধ্বযু এই সময়ে খানিকটা সোমরস আহুতি দেন। শস্ত্রপাঠক আবার বলেন, “সোমস্ত অগ্নে বীহি বৌষটু”—অগ্নি, তুমি সোম ভক্ষণ কর ও বহন কর। এই দ্বিতীয় বার বৌষট উচ্চারণের নাম অনুবষটকার। অনুবষট কারের পর অধ্বযু্য আবার খানিকট সোম আহুতি দেন। আহুতির পর যাহা অবশিষ্ট থাকে, তাহ আহুতিদাতা এবং শস্ত্রপাঠক উভয়ে মিলিয়া পান করেন । ইহাই শস্ত্রপাঠের পর সোমাহুতির সাধারণ নিয়ম। প্রত্যেক আহুতির পরে চমসীরা সোমাহুতি দেন ও চমসস্থ সোম পান করেন । ঐন্দ্রাগ্ন, বৈশ্বদেব এবং উকৃথ্য, এই তিনটি আহুতির কথা বলিয়াছি। প্রথম দুই গ্রহের আহুতিদাতা অর্ধর্বযু ; শস্ত্রপাঠক হোতা। উকৃথ্য গ্রহ তিন অংশে আহুতি দেওয়া হয়। শস্ত্রপাঠক, যথাক্রমে মৈত্রাবরুণ, ব্রাহ্মণাচ্ছংসী ও আচ্ছাবাক্। ইহারা তিন জনেই হোতার সহকারী।