পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ケ8 রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র তাহার সহকারী প্রতিপ্রস্থাত সেই সঙ্গে স্বরা ঢালিয়া দিতেন। স্বরাহুতির মন্ত্ৰ— “বস্তে রসঃ সম্ভ.ত ওষধীমু, সোমস্ত শুষ্মঃ স্বরয়া স্বতস্ত, তেন জিম্ব যজমানং মদেন, সরস্বত্যশ্বিনাবিন্দ্রমগ্নিং স্বাহ৷”—এই মন্ত্রে সুরাকে স্পষ্টতই সোমস্থানীয় বলা হইয়াছে। কালক্রমে এই যজ্ঞে ও স্বরাপান অপ্রচলিত হইয় পড়ে। আপস্তম্ব ব্যবস্থা দিয়াছেন, স্বরার পরিবর্তে দুধ চলিবে । দ্বিজাতিসমাজে—বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের পক্ষে স্বরাপান নিষিদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিল। বৃহস্পতির পুত্র কচের হত্যাপরাধে শুক্রের অভিশাপে স্কর। অপেয় হইয়াছে, এই পৌরাণিক কাহিনী প্রসিদ্ধ হইয়া পড়িয়াছিল। তন্ত্রশাস্ত্র কিন্তু স্বরাকে গ্রহণ করিলেন । মন্ত্র দ্বার স্বরাকে ব্ৰহ্মহত্যার পাপ হইতে মুক্ত করিয়া স্বরাপানের ব্যবস্থা করিলেন । সুরা-শোধনের জন্য একেবারে ব্রহ্মের দোহাই দেওয়৷ হইল। "বেদানাং প্রণবো বীজং ব্রহ্মানন্দময়ং যদি, তেন সত্যেন তে দেবি ব্ৰহ্মহত্যাং বাপেহেতু”—এইরূপে দোহাই দিলে আর কি ব্ৰহ্মহত্যার পাপ থাকিতে পারে ? তান্ত্রিকদিগের স্বরাশোধনের আসল মন্ত্রটি বৈদিক মন্ত্ৰ –“হংস: শুচিষৎ বসুরন্তরীক্ষসৎ, হোত বোধষং অতিথিদুরোণসৎ, নৃষৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ, অজা গোজা ঋতজা অদ্বিজ ঋতম্।” এই মন্ত্রটি ঋগ বেদসংহিতার চতুর্থ মণ্ডলে অাছে। ইহার ঋষি স্বয়ং বামদেব, যিনি মাতৃগর্ভে থাকিতেই ব্ৰহ্মজ্ঞান পাইয়াছিলেন । এই ঋকের নাম হংসবতী ঋকৃ। যাবতীয় ঋকৃমন্ত্রমধ্যে গায়ত্রী মন্ত্রের পরেই বোধ হয় এই মন্ত্রটি প্রসিদ্ধ। তান্ত্রিক হংসমন্ত্রের বা অজপামস্ত্রের মূল এই হংসবর্তী ঋকৃ। ঐ মন্ত্রে যে হংসের কথা উল্লেখ হইতেছে, সেই হংস এক কালে হয়ত আদিত্য ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কালে একবাক্যে তিনি ব্ৰহ্ম অর্থে গৃহীত হইয়াছেন। পুরাণে এই হংস ব্রহ্মার বাহন হইয়াছেন। মন্ত্রটির অর্থ,—এই যে হংস বা ব্রহ্ম, তিনি দু্যলোকে আছেন, অন্তরিক্ষে বাস করিতেছেন, হোতারূপে বেদিতে উপবিষ্ট আছেন, অতিথিরূপে গৃহে গৃহে বিচরণ করিতেছেন, মনুষের মধ্যে আছেন, যাহা কিছু শ্রেষ্ঠ, সেখানে রহিয়াছেন, ব্যোমে অবস্থিত আছেন, সত্যে অবস্থিত আছেন, অপসমূহ হইতে ইহার জন্ম,গো অর্থাৎ বাক্য হইতে ইহার জন্ম, অদ্রি হইতে ইহার জন্ম, সত্য হইতে ইহার জন্ম, ইনি সত্যস্বরূপ। তান্ত্রিকেরা এই মন্ত্রে স্বরাশোধন করিলে স্বরা একেবারে ব্রহ্মস্বরূপ হইয়া যায়। খ্ৰীষ্টান ঘাজক মন্ত্র দ্বারা উৎসর্গ করিব মাত্র স্বরা যেমন খ্ৰীষ্টের রক্তে পরিণত হয়, সেইরূপ। সোম যেমন অমরত দেন, স্বরাও তেমনই অমরত দিয়া থাকেন। এখন আপনারা খ্ৰীষ্টপন্থীর স্বরাপানের সহিত বেদপন্থীর সোমপানের, আর তন্ত্রপন্থীর স্বরাপানের সম্পর্ক বুঝিতে পারিলেন। খ্ৰীষ্টানেরা যেমন দেবতাকে আত্মসাৎ করেন, বেদপন্থীও সেইরূপ করেন । এই ষে সোম, ইনি স্বয়ং একজন দেবতা, দেবগণের মধ্যে ইনি একজন রাজা। সোম-যজ্ঞে সোম ক্রয় করিয়া যখন যজ্ঞশালায় আন। হয়, তখন তাহাকে রাজোচিত সম্মানই দেওয়া হয়। যজ্ঞশালায় তাহাকে রাজার মত উচ্চ আসনে রাখা হয়। রাজা অতিথিরূপে যজ্ঞশালায় আসিয়াছেন বলিয়া তাহার সম্বৰ্দ্ধনার জন্ত আতিথ্য ইষ্টিযজ্ঞ করা হয়। সোমযাগের পূর্বদিনে যখন র্তাহাকে সেখান হইতে লইয়া মহাবেদির উপরে হবিধান মণ্ডপে রাখা হয়, তখন র্তাহার সম্বৰ্দ্ধনার জন্য পশুষাগ করিতে হয় । সোমষজ্ঞে এই দেবগণের রাজা সোমকেই