পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অভিভাষণ abr? সাহিত্য-সন্মিলনকে বিভিন্ন শাখায় বিভাগের প্রস্তাব যথারীতি উপস্থিত করা হয়। কিন্তু তখন উহা কাৰ্য্যে পরিণত হয় নাই। পর-বৎসর হুগলীতে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লইয়া যে কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন, তাহারা কতকটা বিদ্রোহী হইয় উঠেন। শশধর বাৰু এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন বলিলে অত্যুক্তি হইবে না। ইহার ফলে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ-লেখকদিগের একটি স্বতন্ত্র অধিবেশন হইয়াছিল এবং ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাহার নেতৃত্ব করিয়াছিলেন। তৎপরবৎসর চট্টগ্রামে আমি উপস্থিত হইতে পারি নাই ; কিন্তু যে কয়েক জন বিজ্ঞানসেবক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, তাহার। পূৰ্ব্ব হইতেই কতকটা স্বাতন্ত্র্যপ্রার্থ হইয়া গিয়াছিলেন। ডাক্তার প্রফুল্লচন্দ্র রায় সম্মিলনের এই বিজ্ঞানবিভাগের সভাপতি ছিলেন । বর্তমান বৎসরে কলিকাতায় সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন এবং ইতিহাস—এই চারি শাখায় সাহিত্য-সম্মিলনকে বিভক্ত করিবার কল্পনা হইয়াছে এবং আমুর উপর বিজ্ঞান-সভার নকিবির ভার অপিত হইয়াছে। ভবিষ্যতে এইরূপ শাখা-বিভাগ সর্বত্র সাধ্য হইবে কিনা, বলা দুষ্কর। কলিকাতার পক্ষে যাহা সাধ্য—স্থানাভাব, কালাভাব এবং লোকাভাবে মফঃস্বলের ক্ষুদ্র নগর গুলির পক্ষে তাহা সাধ্য না হইতে পারে। অন্য শাখার কথা বলিতে পারি না, বিজ্ঞান শাখা এই কয়েক বৎসরের চেষ্টায় যে স্বাতন্ত্র্যটুকু অর্জন করিয়াছেন, তাহা ত্যাগ করিতে সহজে প্রস্তুত হইবেন কি না সন্দেহ। এই সম্বন্ধে বিজ্ঞানশাখার একটু বিশেষ আদরের কারণ আছে। বৈজ্ঞানিকেরা সাধারণতঃ যে ভাষায় আপনাদের মধ্যে কথা কহিয়া থাকেন, তাহ তাহারা নিজেরাই বোঝেন, জনসাধারণের তাহা বোধ্য নহে। তাহাদের ভাষা, তাহাদের চিন্তার প্রণালী, তাহাদের কার্য্য প্রণালী কতকটা অদ্ভুত গোছের। র্তাহারা যে পথে, যে প্রণালীতে, যে মন্ত্রের সাধনা করিতেছেন, তাহা অধিকারী ভিন্ন অন্যের পক্ষে সুগম নয়। র্তাহাদের সাধনাক্ষেত্রে দীক্ষিত ভিন্ন অন্যের প্রবেশ নিষেধ। র্তাহারা পরস্পর কথা কহিবার সময় যে সকল সঙ্কেতের, যে সকল ইঙ্গিতের প্রয়োগ করেন, সৰ্ব্বসাধারণের নিকট তাহা দুৰ্ব্বোধ্য হেঁয়ালি মাত্র। সে হেঁয়ালি ভাঙ্গিতে যে না পারা যায়, এমন নয় ; তবে তাহারা নিজের সাধনায় এত ব্যস্ত যে, সে হেঁয়ালি ভাঙ্গিয় তাহার তাৎপৰ্য্য স্পষ্ট করিবার অবকাশ তাহাদের একেবারে নাই। সে প্রবৃত্তিও সকলের নাই। এ জন্য র্তাহাদিগকে দোষ দেওয়া যায় না। সাধনার পথ সৰ্ব্বত্রই দুর্গম এবং সাধকেরা সৰ্ব্বত্রই আত্মগোপনে অভ্যস্ত এবং দূরে থাকিতে উৎসুক। বাঙ্গালা দেশে ইহার মধ্যে যে একটা বৈজ্ঞানিকমণ্ডলী বা বৈজ্ঞানিক সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, এ কথা বলিলে হয় ত অত্যুক্তি হইবে। এ দেশে যাহার স্বাধীনভাবে বিবিধ বিজ্ঞানের আলোচনা করিতেছেন, তাহাদের সংখ্যা এখনও অঙ্গুলি সংখ্যায় নির্দেশ করা যাইতে পারে। কিন্তু দেশের মধ্যে যে একটা নূতন হাওয়া বহিয়াছে, সে বিষয় কোন সন্দেহ নাই। এই কয়েক বৎসর মধ্যেই এ দেশের কতিপয় বিজ্ঞানসেবী যেরূপ কৃতিত্ব দেখাইয়াছেন, তাহাতে ভবিষ্যৎ আশামণ্ডিত হইয়া উঠিয়াছে। পঞ্চাশ বৎসরের অধিক হইল, বিশ্ববিদ্যালয় রা–১৯