পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সাহিত্য-কথা \9ר צ সে সৰ্ব্বত্র স্বন্দর পদার্থ দেখিতে পায় না ; হয়ত কুৎসিত পদার্থই দেখে অথবী সকল দ্রব্যই বর্ণহীন অরঞ্জিত অবস্থায় দেখে। আর যাহার ভিতরে অনুরাগের মাত্র অধিক, সে অন্যের নিকট রূপহীন বা কুৎসিত স্থলেও সৌন্দর্য্যের ও রূপের বিকাশ দেখিতে পায়। অর্থাৎ কি না, সে ব্যক্তি নিজের ব্যবহারের জন্য, নিজের তৃপ্তির জন্য জগতে সৌন্দর্য্যের ও রূপের স্বষ্টি করে। এই হেতু অকুরাগী ব্যক্তি কেবলমাত্র সৌন্দর্য্যের সংগ্রহকারী নহেন ; তিনি সৌন্দর্য্যের বিধাতা ও নিৰ্ম্মাতা। আমরা দেখি, মধুকর জাতি মধুর অন্বেষণ ও সংগ্ৰহ করিয়া বেড়ায় ; কিন্তু জীবতত্ত্ববিদেরা বলেন, মধুকরজাতীয় • পতঙ্গ কর্তৃকই ফুলে, মধুর স্বষ্টি হইয়াছে। কতকটা সেইরূপে মধুকন্নোপদ্ধ অনুরাগী ব্যক্তির চেষ্টায় জগতে সৌন্দর্য্যের উৎপত্তি হইয়াছে। কালিদাস এই শ্রেণীর অনুরক্ত পুরুষ ছিলেন, এবং বোধ করি মনুষ্য জাতি মধ্যে এত বড় অনুরক্ত পুরুষ আর জন্মায় নাই। অপর সাধারণে যেখানে সৌন্দর্য্য দেখে না, কালিদাস সেখানে সৌন্দৰ্য্য দেখিতেন ; অপরের নিকট যাহা সাদ, কালে অথবা বর্ণহীন, তাহার নিকট তাহী রূপবান ও রঞ্জিত। এমন করিয়া যেথায় সেথায় সৌন্দৰ্য্য উৎপাদন করিতে, জগৎ যুড়িয়া সৌন্দর্য্য ছড়াইতে আর কাহাকেও দেখা যায় নাই। কালিদাস নিজে সেই সৌন্দৰ্য্য দেখিতেন ও অপরকে তাহা দেখাইতেন। তিনি আপনার জন্য অপরূপ চশমাখানি তৈয়ার করিয়া অন্যের চোখে তাহ পরাইয়া দিতেন ; আর যেন কোন অপূৰ্ব্ব কুঁহক অথবা যাদুবিদ্যার প্রভাবে সংসারের চিত্রপটখানা অভিনব আকার ধারণ করিত। তিনি যেখানে চাহিতেন, তখনই তাহা আপন হইতে সুন্দর হইয়া যাইত। তিনি চাহিবার পূৰ্বে সেখানে অন্যে রূপের আবির্ভাব দেখিতে পাইত না। অশোক তরু না কি পুষ্পোদগমের জন্য সুন্দরীর নূপুৰ্বকণিত চরণাঘাতের প্রতীক্ষায় বসিয়া থাকে ; সেইরূপ নীরস কর্কশ রূপহীন জগৎ সৌন্দৰ্য্যপুষ্পের উদগমের জন্য কালিদাসের অপেক্ষায় বসিয়া থাকিত। এমন করিয়া যেখানে সেখানে রূপের উৎপত্তি করিতে আর কেহ পারে নাই। মদম্রাবী হাতীর মত্ত গতিতে, অথবা বৃষভের খুরাস্ফালনে, অথবা হিমগিরিগহ্বরপ্রাস্তস্থ কীচকের দূরাগত ধ্বনিতে অন্যে যে পুলক পায় না, কালিদাস তাহ পাইতেন। সায়ংকালে বন্ধলপরিহিতা বনসুন্দরীগণ আলবালে জলসেচন আরম্ভ করিলে কেমন সুন্দর দেখায়, সুন্দরীর বদনকমলে কমল ভ্রমে মধুকর আসিয়া দৌরাত্ম্য আরম্ভ করিলে তাহাকে লীলাকমলাঘাতে তাড়নার জন্য মৃণালবাহু সঞ্চালিত করিলে কেমন দেখায়, এবং চন্দ্রকর-ধৌত শুদ্ধ স্ফটিক প্রাস্তরে দিব্য কুমারীগণ মুক্ত ছড়াইয়। ক্রীড়মান হইলে কিরূপ সৌন্দর্ঘ্যের ক্ষত্তি হয়, তাহা আমরা তাহার প্রসাদে কতকটা অনুভব করিতে পারি ; তবে তাহারই মত সেই রসের আকণ্ঠ সম্ভোগের ক্ষমতা আমাদের জন্মিয়াছে কি না সন্দেহ । জননী বস্থমতী কর্তৃক নীয়মান সীতা, অথবা হেমষজ্ঞোপবীতধারী মুক্তাক্ষমালালঙ্কত তেজসমষ্টিরূপ সপ্তর্ষির সহচারিণী অরুন্ধতী যখন ভক্তৃ চরণে নয়নদ্বয় নিহিত করিয়া অবস্থিতা ছিলেন, তখন কিরূপ মহিমার প্রভ} উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহা ইতর মানবে কখন পূর্ণমাত্রায় অনুভব করিতে সমর্থ, হয় নাই। এই সকল কারণে বলা ঘাইতে পারে, যদি সৌন্দৰ্য্যায়ভূতি মন্থন্স-প্রকৃতির,