পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নানাকথা : সাহিত্য-কথা סואסי বাহিরে ছিলেন না অথচ এই সামান্য রন্ধ্রপথে পাপ প্রবেশ করিয়া বেচারার কি পরিণাম ঘটাইল। নিষধরাজ নলের শরীরে প্রবেশের জন্য কোন দেবতা নাকি বহুকাল ধরিয়া রন্ধান্বেষণে তৎপর ছিলেন ; তার পর এক দিন ঘটনাক্রমে লব্ধমার্গ হইয়া মহান অনর্থপাত উপস্থিত করেন ও নিরীহ রাজা মহাশয়ের দুৰ্গতির একশেষ করিয়াছিলেন । ম্যাকৃবেথেরও অবস্থা সেইরূপ। ম্যাকৃবেথের মনে কোথায় একটু ছিদ্র ছিল, কেহ এত দিনে দেখিতে পায় নাই, তিনি স্বয়ং তাহার অস্তিত্ব অবগত ছিলেন না। কিন্তু দুরন্ত দেবতা তাহার সর্বনাশ সাধনে যেন পূৰ্ব্ব হইতেই কৃতসঙ্কল্প হইয়া আয়াসে সেই ছিদ্রটি খুজিয়া লইল } গুরুগম্ভীর ভাবে ম্যাকৃবেথের সমালোচনায় অথবা বিশ্লেষণে প্রবৃত্ত হইবার আমার অভিরুচি নাই। সমালোচনা ও বিশ্লেষণের অসহ্লাবের জন্য ম্যাকৃবেথভ্রষ্টা মহাকবির প্রেতাত্মাকে কখন নিঃশ্বাস ফেলিতে হইবে না। আমার এই প্রস্তাব অবতারণার উদ্দেশ্য এই পর্য্যন্ত যে, মহাকবি এই স্থলে একটা সংসারের সত্য কথ। নিভীকচিত্তে বলিয়া ফেলিয়াছেন। নীতিকার ও শাস্ত্রকার যে কথাটা স্পষ্ট বলিতে সাহস করেন না বা অন্যে বলিলে চোখ রাঙাইয়া ভয় দেখান, মহাকবি সেই কথা অকুতোভয়ে বলিয়া যশস্বী হইয়াছেন। এই অর্থে মহাকবির স্থান নীতিকার ও শাস্ত্রকারের উপরে। সাধারণ মনুষ্যেও তাহা স্বীকার করে ; বিশেষ ওকালতির দরকার করে ন! | পদার্থ-বিদ্যার অন্তর্গত গতিবিজ্ঞানে একট। সিদ্ধান্ত আছে যে, সময় মত থাকিয়া থাকিয়া একটু একটু ধাক্কা দিলে হিমাচলের মত প্রকাও পদার্থটাকেও কঁপিাইতে বা ধরাশায়ী করা যাইতে পারে। কৈলাস-পৰ্ব্বত তুলিবার জন্য রাবণের এবং গন্ধমাদন উত্তোলনের জন্য হনুমানের মত মহাবীরের দরকার হইয়াছিল। কিন্তু পদার্থ-বিদ্যার পেণ্ডুলমতত্ত্ব অবগত থাকিলে পঞ্চবর্ষবয়স্ক বালকেও এই প্রকাও ব্যাপারটা সহজেই সম্পন্ন করিয়া ফেলিতে পারিত। মনস্তত্ত্ববিদের ভ্র কুটিভয় সত্ত্বেও আমি মহুষ্যের চিত্তটাকে একটা স্ববৃহং মস্কো নগরের ঘণ্টার মত পদাৰ্থ বলিতে চাহি। অর্থাৎ অনেক সময়ে বাহ শক্তি প্রভূত পরিমাণে বল প্রয়োগ করিয়াও মানুষের অন্তঃকরণকে স্থানভ্রষ্ট ও বিচলিত করিতে পারে না ; আবার অতি মৃত্যু পবন-হিল্লোল যদি সময়মত আসিয়া আস্তে আস্তে ছোট ছোট ধাক্কা দেয়, তাহা হইলে ঘণ্টাটা বেগে আন্দোলিত হইয়া দিগন্ত নিনাদিত করিয়া তুলিতে পারে। কোন কোন মহাকায় অর্ণবযান বড় বড় ঝটিকার বেগ অতিক্রম করিয়া সামান্ত হাওয়ায় জলমগ্ন হয়। আবার উত্তাল তরঙ্গমালার উপর সের কতক কেরোদিন ঢালিয়াও তাঁহাদের ক্ষোভ প্রশমিত হইতে দেখা যায়। মানুষের মনও কতকটা সেইরূপ। যখন টলে না, তখন টলে না; আবার সময়ে অসময়ে অতি সামান্য কারণ উপরি উপরি ঘটতে থাকিলে সাম্যাবস্থাচু্যত হইয়া কোথায় পড়ে কে জানে/ ম্যাকৃবেথ যখন যুদ্ধে জয়লাভ করিয়া বীরদৰ্পে ও রাজপ্রসাদাশয়ে স্ফীত হইয়া ফিরিতেছিলেন, ঠিক এমনই সময়ে তাহার মনের ছিদ্রট একটু এমনি অসতর্কভাবে আবিষ্কৃত হইয়া পড়িয়াছিল যে, শয়তানের অঙ্গুচরীগুলা ঠিক সময় বুঝিয়া একটা কুয়াশ ও দুদিনের স্বষ্টি করিয়া প্রকৃতির মুখখানা আঁধার করিয়া ফেলিল। এবং