૨ রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র এমন সময় মর্ত্যে কলির উদয় হ’ল । লোকে ধৰ্ম্মকৰ্ম্ম ছাড়তে লাগল। ব্রাহ্মণসজ্জনে অনাচারী হ'ল। সন্ন্যাসীরা ভণ্ড হ’ল। সকলে বেদবিধি অমান্য করতে লাগল। লক্ষ্মী চঞ্চল ; তিনি চঞ্চল হলেন । লক্ষ্মী ভাবলেন—হায়, আমি বাঙলার লক্ষ্মী ; আমাকে বুঝি বাঙলা ছাড়তে হ’ল। তখন বাঙলাতে রাজা ছিলেন, তার নাম আদিশূর। লক্ষ্মী তাকে স্বপ্ন দিলেন, আমি বাঙলার লক্ষ্মী ; বাঙলায় অনাচার ঘটেছে ; অামি বাঙলা ছেড়ে চললেম। রাজ কেঁদে বললেন—ন মা, তুমি বাঙলা ছেড়ে যেয়ে না ; যাতে বাঙলায় সদাচার ফিরে আসে, তা আমি করছি। রাজা ঘুম ভেঙে দরবারে বসলেন। দরবারে বসে পশ্চিমদেশে কনে জে-লোক পাঠালেন ; কনোজ থেকে পাচ জন পণ্ডিত ব্রাহ্মণ আনালেন । তাদের সঙ্গে পাচ জন সজ্জন কায়েত এলেন । রাজা তাদের রাজ্যের মধ্যে বাস করালেন। তারা বাঙলাদেশে বেদবিধি নিয়ে এলেন, সদাচার নিয়ে এলেন। তাদের ছেলেমেয়ে বাঙলার গায়ে গায়ে বাস করতে লাগল। তাদের দেখাদেখি দেশে বেদবিধি সদাচার ফিরে এল। বাঙলার লক্ষ্মী বাঙল জুড়ে বসলেন । ধনে ধানে দেশ পূর্ণ হ’ল। চিরদিন সমান যায় না। লক্ষ্মী চঞ্চল ; তিনি আবার চঞ্চল হলেন। বাঙলার ধন দেখে ধান দেখে মোছলমান বাঙলায় এলেন। তখন বাঙলার রাজা ছিলেন, র্তার নাম ছিল লক্ষ্মণ সেন । র্তার রাজ্য গেল। মোছলমান বাঙলার রাজা হ’লেন। হিন্দুর জাতিধৰ্ম্ম নষ্ট হতে লাগল। হিন্থর ঠাকুরঘর ভেঙে, মোছলমান মসজিদ তুলতে লাগলেন। অৰ্দ্ধেক হিন্দু মোছলমান হল। হিন্দু-মোছলমানে এক গায়ে এক ঠায়ে বাস ক’রে মারামারিকাটাকাটি করতে লাগল। লক্ষ্মী ভাবলেন, হায়, আমি বাঙলার লক্ষ্মী, আমাকে বুঝি বাঙলা ছাড়তে হ'ল। তখন বাঙলাতে গৌড়ের পাঠানবাদশ রাজা ছিলেন, তার নাম ছিল হোসেনশা। লক্ষ্মী তাকে স্বপ্ন দিলেন, আমি বাঙলার লক্ষ্মী, আমার হিন্দুও যেমন, মোছলমানও তেমনি ; হি দু মোছলমান ভাই-ভাই যখন মারামারি-কাটাকাটি করতে লাগল, আমি বাঙলা ছেড়ে চললেম। পাঠান রাজা কেঁদে বল্পেন—ম, তুমি যেতে পাবে না ; আমি হি দু-মোছলমান সমান দেখব ; তাদের ভাই-ভাই একঠাই করব ; তুমি বাঙলা ছেড়ে যেয়ে না। লক্ষ্মী বল্পেন— আচ্ছা, তাই হবে ; আমি এখন থাকব। দিল্লীতে মোগল বাদশা হবেন । দিল্লীর বাদশা বাঙলার রাজা হবেন ; সেই রাজা হি দুমোছলমান সমান দেখবেন ; তখন হি দু-মোছলমান ভাই-ভাই হবে, ঝগড়-বিবাদ মিটে যাবে। রাজ ঘুম ভেঙে দরবারে বস্লেন। দরবারে ব্রাহ্মণ এসে রাজাকে মহাভারত শোনালে। মোছলমান রাজ ব্রাহ্মণকে মান্য করে রাজমন্ত্রী করলেন। হিন্দু গিয়ে মোছলমানের পীরতলায় সিন্নি দিতে লাগল। এমন সময় মহাপ্রভু নদীয়ায় অবতার হ’লেন। তিনি যবন ব্রাহ্মণ সবাইকে ডেকে কোল দিলেন। পাঠানের পর দিল্লীর মোগল বাদশা বাঙলার রাজা হ’লেন। তিনি হি দু-মোছলমানকে সমান চোখে দেখতে লাগলেন। হিছু-মোছলমান ভাই-ভাই হ’ল, ঝগড়া-বিবাদ মিটে গেল। বাঙলার লক্ষ্মী বাঙলা জুড়ে বসলেন । ধনে ধানে দেশ পূর্ণ হ’ল । এইরূপে বহুদিন গেল। চিরদিন 'সমান যায় না। লক্ষ্মী চঞ্চল ; তিনি আবার চঞ্চল হলেন। দিল্লীর তখনকার বাদশা ছিলেন, তার নাম ছিল আলমগির। তিনি হিছ-মোছলমানে তফাত করতে গেলেন। বর্গী এসে বাদশার রাজ্য লুঠ করতে লাগল।