পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তখনই ধরা পড়ত, দেশের ধন এত কিছু বেশি নয় যাতে সকলেরই ভাতকাপড় যথেষ্ট পরিমাণে জোটে। এখানে ভেদ নেই বলেই ধনের চেহারা গেছে ঘুচে, দৈন্যেরও কুশ্রীতা নেই, আছে অকিঞ্চনতা। দেশ-জোড়া এই অধন আর কোথাও দেখি নে বলেই প্রথমেই এই আমাদের খুব চোখে পড়ে। অন্য দেশে যাদের আমরা জনসাধারণ বলি, এখানে তারাই একমাত্র।

 মস্কৌয়ের রাস্তা দিয়ে নানা লােক চলেছে। কেউ ফিটফাট নয়, দেখলেই বােঝা যায় অবকাশভােগীর দল একেবারে অন্তর্ধান করেছে, সকলকেই স্বহস্তে কাজকর্ম করে দিনপাত করতে হয়,বাবুগিরি পালিশ কোনাে জায়গাতেই নেই। ডাক্তার পেট্রোল বলে এক ভদ্রলােকের বাড়ি যেতে হয়েছিল, তিনি এখানকার একজন সম্মানী লােক, উচ্চপদস্থ কর্মচারী। যে-বাড়িতে, তাঁর আপিস সেটা সেকালের একজন বড়োলােকের বাড়ি, কিন্তু ঘরে আসবাব অতি সামান্য, পারিপাট্যের কোনাে লক্ষণ নেই—নিষ্কার্পেট মেঝের এ কোণে যেমন-তেমন একখানা টেবিল। সবসুদ্ধ পিতৃবিয়ােগে ধােপানাপিতবর্জিত অশৌচদশার মতো শয্যাসনশুন্য ভাব, যেন বাইরের লােকের কাছে সামাজিকতা রক্ষা কোনাে দায় নেই। আমার বাসায় আহারাদির যে ব্যবস্থা তা গ্র্যাণ্ড হােটেল নামধারী পান্থারাসের পক্ষে নিতান্তই অসংগত। কিন্তু এজন্যে কোনাে কুণ্ঠা নেই—কেননা সকলেরই এক দশা।

 আমাদের বাল্যকালের কথা মনে পড়ে। তখনকার জীবনযাত্রা ও তার আয়ােজন এখনকার তুলনায় কতই অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু সেজন্যে আমাদের কারাে মনে কিছুমাত্র সংকোচ ছিল না; তার কারণ, তখনকার সংসারযাত্রার আদর্শে অত্যন্ত বেশি উঁচুনিচু ছিল না—সকলেরই ঘরে একটা মােটামােটি রকমের চালচলন ছিল—তফাত যা ছিল তা