পাতা:রাশিয়ার চিঠি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যে ক্ষেত্রে গিয়ে তাদের আহরণ করবার উপায় নেই, ভাণ্ডার থেকেই তাদের বেশির ভাগ সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু পুঁথির বিদ্যালয়কে সঙ্গে করে নিয়ে যদি প্রকৃতির বিদ্যালয়ের মধ্যে দিয়ে ছাত্রদের বেড়িয়ে নিয়ে আসা যায় তাহলে কোনাে অভাব থাকে না। এ-সম্বন্ধে অনেক কথা আমার মনে ছিল, আশা ছিল যদি সম্বল জোটে তবে কোনো এক সময়ে শিক্ষাপরিব্রজন চালাতে পারব। কিন্তু আমার সময়ও নেই, সম্বলও জুটবে না।

 সােভিয়েট রাশিয়ায় দেখছি সর্বসাধারণের জন্যে দেশভ্রমণের ব্যবস্থা ফলাও করে তুলছে। বৃহৎ এদের দেশ, বিচিত্রজাতীয় মানুষ তার অধিবাসী। জারশাসনের সময়ে এদের পরস্পর দেখাসাক্ষাৎ জানাশােনা মেলামেশার সুযােগ ছিল না বললেই হয়। বলা বাহুল্য তখন দেশ-ভ্রমণ ছিল শখের জিনিস, ধনী লােকের পক্ষেই ছিল সম্ভব। সােভিয়েট আমলে সর্বসাধারণের জন্যে তার উদ্যোগ। শ্রমক্লান্ত এবং রুগ্ন কর্মিকদের শান্তি এবং রােগ দূর করবার জন্যে প্রথম থেকেই সােভিয়েটরা দূরে নিকটে নানাস্থানে স্বাস্থ্যনিবাস স্থাপনের চেষ্টা করেছে। আগেকার কালের বড়ো বড়াে প্রাসাদ তার এই কাজে লাগিয়েছে। সেসব জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম এবং আরােগ্য লাভ যেমন একটা লক্ষ্য তেমনি শিক্ষালাভ আর-একটা।

 লােকহিতের প্রতি যাদের অনুরাগ, আছে এই ভ্রমণ উপলক্ষ্যে তারা নানা স্থানে নানা লােকের আনুকুল্য করবার অবকাশ পায়। জনসাধারণকে দেশভ্রমণে উৎসাহ দেওয়া এবং তার সুবিধা করে দেওয়ার জন্যে পথের মাঝে মাঝে বিশেষ বিশেষ শিক্ষা বিতরণের উপযােগী প্রতিষ্ঠান খােলা হয়েছে, সেখানে পথিকদের আহারনিদ্রার ব্যবস্থা আছে, তা ছাড়া সকল রকম দরকারী বিষয়ে তারা পরামর্শ পেতে পারে।

৬৬