সার্বজনিক-দণ্ড-যন্ত্রের উপর কর্তৃত্ব থাকাতে এবং কর আদায় করার অধিকার থাকার দরুন, রাজপুরুষেরা সমাজের উর্দ্ধে থাকিয়া সমাজেরই যন্ত্ররূপে বিহার করে। গোষ্ঠীভিত্তিক [কৌলিক] সংগঠনের মুখপাত্রেরা যেরূপ সহজ স্বতঃপ্রণোদিত সম্মানের অধিকারী ছিল, এমন-কি সেই রকম শ্রদ্ধা লাভ করিতে পারিলেও এই-সব রাষ্ট্রীয় কর্মচারী সত্তুষ্ট নয়...”[১]
রাজপুরুষেরা যে পবিত্র এবং তাহাদের নির্দেশ যে লঙ্ঘন করা চলিবে না, সে-সম্পর্কে বিশেষ-বিশেষ আইন তৈরি হয়। *গোষ্ঠীর সমস্ত প্রতিনিধির তুলনায় একজন ‘খুদে পুলিশ কর্মচারী’রও বেশি ‘কর্তৃত্ব’ আছে; কিন্তু এমন-কি গোষ্ঠীর সর্দারও যে স্বতঃপ্রণোদিত ও অবিসংবাদিত সম্মানের অধিকারী, কোনও সভ্য রাষ্ট্রের সামরিক শক্তির সর্বাধিনায়কের পক্ষেও তা ঈর্ষার বস্তু।’ [২]
রাষ্ট্রশক্তির যন্ত্র হিসাবে রাজপুরুষদের বিশেষ সুবিধা ও অধিকার ভোগের কথা এখানে স্পষ্ট বলা হইয়াছে। মুখ্য বিষয়টি এইভাবে নির্দেশ করা হইয়াছে; যাহার জোরে রাষ্ট্রীয় কর্মচারীরা সমাজের উর্দ্ধে অবস্থান করে, তাহা কী? ১৮৭১ সালে প্যারিস কমিউনও কিভাবে এই তাত্বিক প্রশ্নটি কার্যত সমাধান করিয়াছিল, এবং ১৯১২ সালে কাওট্স্কি প্রতিক্রিয়াশীলতার আশ্রয়ে থাকিয়া কিভাবে প্রশ্নটি নমোনমঃ করিয়া এড়াইয়া গিয়াছিলেন—তাহা আমরা দেখিতে পাইব।
“যেহেতু শ্রেণী-বিরোধকে সংযত করিয়া রাখার প্রয়োজন হইতে রাষ্ট্রের উদ্ভব হইয়াছে, কিন্তু আবার যেহেতু শ্রেণীদ্বন্দ্বের মধ্য হইতেই ইহার উৎপত্তি, সুতরাং ইহাই স্বাভাবিক যে রাষ্ট্র হইবে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী শ্রেণীর, অধিক দিক হইতে যে শ্রেণী মাতব্বর, তাহার নিজস্ব রাষ্ট্র; রাষ্ট্রের মাধ্যমে এই শ্রেণী রাজনীতির ক্ষেত্রেও মাতব্বর শ্রেণীতে পরিণত হয় এবং নিপীড়িত শ্রেণীকে শোষণ করিবার ও দাবাইয়া রাখিবার নূতন-নূতন উপায় আয়ত্ত করে।”[৩]
প্রাচীন ও সামন্ততান্ত্রিক রাষ্ট্র গোলাম ও ভূমিদাসদের শোধণ করিবার যন্ত্র ছিল; সেইসপ, * আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক রাষ্ট্র হইতেছে মজুরিজীবি শ্রমিকদের শোষণ করিবার জন্য পুঁজিপতিদের এক যন্ত্র। ইহার ব্যতিক্রম হিসাবে অবশ্য