পাতা:রিক্তের বেদন - কাজী নজরুল ইসলাম.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রিক্তের বেদন্

 সেদিন চিঠি পেলুম, শহিদার, আমার গোপন ঈপ্সীতার বিয়ে হয়ে গেছে,—সে সুখী হয়েছে!······মনে হ’ল, যেন এক বন্ধন হ’তে মুক্তি পেলেম।—না, না, আর অসত্য বল্‌ব না, আমার সেই সময় কেমন একটা হিংসা আর অভিমানে সারা বুক যেন আলোড়িত হয়ে উঠেছিল, তাই এই ক’দিন ধরে বড় হিংস্রের মতই ছুটে বেড়িয়েছি, কিন্তু শান্তি পাইনি! এই আমাদের রক্তমাংসময় শরীর আর তারই ভিতরকার মনটা নিয়ে যতটা অহঙ্কার করি, বাইরে তার কতটুকু টিকে?—যেমনি মনটাকে পিটিয়ে পিটিয়ে এক নিমেষের জন্য দুরন্ত করে’ রাখি, অমনি মনে হয় ‘এই ত এক মস্ত দরবেশ হয়ে পড়েছি!’ তারপরেই আবার কখন্‌ কোন্ ক্ষণে যে মনের মাঝে ক্ষুধিত বাসনা হাহাকার ক্রন্দন জুড়ে’ দেয়, তা আর ভেবেই পাই না। আবার, পেলেও সেটাকে মিথ্যা দিয়ে ঢাক্‌তে চাই!—হায়রে মানুষ! বুঝি বা এই বন্ধনেই সত্যিকার মুক্তি রয়েছে! কে জানে?······ভুলে’ যাও অভাগিনী শহিদা, ভুলে’ যাও—সকল অতীত, সব স্মৃতির বেদনা, সব গোপন আকাঙ্খা সব কিছু। সমাজের চারিদিক অন্ধকার খাঁচায় বন্দিনী থেকে’ কেন হতভাগিনী তোমরা এমন করে’ অ-পাওয়াকে পেতে চাও? কেন তোমাদের মুগ্ধ অবোধ হিয়া এমন করে’ তারই পায়ে সব ঢেলে’ দেয়, যাকে সে কখ্‌খনো পাবে না? তবে কেন এ অন্ধ কামনা?······বিশ্বের গোপনতম অন্তরে অন্তরে তোমাদের এই ব্যর্থপ্রেমের বেদনা-ধারা ফল্গুনদীর

২৪