কওসর পিতামহের অতি আদরের পৌত্রী। তিনি সাধ করিয়া ইহার নাম ‘কওসর’ রাখিয়াছেন। কওসর শব্দের অর্থ স্বগীয় জলাশয়, যেমন মন্দাকিনী।[১]
যে কক্ষে তাহারা উপবেশন করিয়াছেন, সেটি কতক মুসলমানী ও কতক ইংরাজী ধরণে সজ্জিত; নবাবী ও বিলাতী ধরণের সংমিশ্রণে ঘরখানি মানাইয়াছে বেশ। ত্রিপদীর (টিপায়ের) উপর একটি ট্রেতে কিছু জলখাবার এবং চা-দুগ্ধ ইত্যাদি যেন কাহার অপেক্ষায় রাখা হইয়াছে।
গওহর আলীর হস্তে একখানি পুস্তক; তিনি তাহা পাঠ করিয়া সকলকে বুঝাইয়া দিতেছেন। তাহাদের আলোচ্য বিষয় ছিল, বায়ু। বায়ুর শৈত্য, উষ্ণতা, লঘুত্ব, গুরুত্ব; বায়ুতে কয় প্রকার গ্যাস আছে; কিরূপে বায়ু ক্রমান্বয়ে বাম্প, মেঘ, সলিল, এবং শীতল তুষারে পরিণত হয়, ইত্যাদি ইত্যাদি। শ্রোতৃবর্গ বেশ মনোযোগসহকারে শ্রবণ করিতেছে; কেবল সপ্তমা দুহিতা সুরেয়া নানাপ্রকার প্রশ্ন দ্বারা পিতার ধৈর্য্যগুণ পরীক্ষা করিতেছে! কখনও ছবি দেখিবার জন্য পিতার হস্ত হইতে পুস্তক কাড়িয়া লইতেছে।! পিতা কিন্তু ইহাতে বিরক্ত না হইয়া বরং আমোদ বোধ করিয়া হাসিতেছেন।
গৃহিনী নূরজাহা একবার ঐ ট্রের দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া বলিলেন, “ভাই এখনও আসিলেন না; চা ত ঠাণ্ডা হইতে চলিল।”
গওহর। তোমার ভাই হয়ত পথে লেচ্চাদরের সঙ্গে খেলা করিতেছেন! বালিকা রাবেয়া বলিল, “আমরা তাঁহাকে দ্বিতীয় বেঞ্চের নিকট অতিক্রম করিয়া আসিয়াছি। এইটুকু পথ তিনি এখনও আসিতে পারিলেন না?”
সুরেয়া। বাব্বা! বেন্ কি অল্প পথ? আমি ত হাঁটিতে না পরিয়া আয়ার কোলে চড়িয়া আসিলাম।
রাবেয়া? ঈশ! আমি এক দৌড়ে দ্বিতীয় বেঞ্চ হইতে এখানে আসিতে পারি।
- ↑ বালিকাদের নাম ও বয়স জানিয়া রাখিলে পাঠিকার বেশ সুবিধা হইবে। কওসরের ১৮, আখতরের ১৬, বদরের ১৪, রাবেয়ার ১২, মুশতরীর ১০, জোহরার ৮, সুরেয়ার ৬, নয়িমার ৪, এবং মাসুমার বয়স ২ বৎসর।
করিয়াছেন, ইহাতে তাহার সব কথার সহিত আমাদের মতের মিল থাকিতে পারে না। এসলামের প্রকৃতস্বরূপ এখনও বহুস্থলে অপ্রকাশিত রহিয়াছে। আমরা যদি যথাযথভাবে ঐ স্বরূপটা জগতের সম্মুখে উপস্থিত করিতে পারি, তাহা হইলে প্রত্যেক ন্যায়দর্শী ও সত্যানুসন্ধিৎসুহৃদয়ই তাহার নিকট আত্মদান করিতে বাধ্য হইবে।
আল্লার প্রেরিত সমস্ত ধর্ম্মপ্রচারক যাহারা মানবজাতির কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে আগমন করিয়াছেন, মুসলমান মাত্রেরই মান্য ও নমস্য। তাহাদিগের উপর বিশ্বাস না করিলে কেহ মুসলমানই হইতে পারে আর আমাদের ধর্ম্মশাস্ত্রে যে সকল পয়গম্বরের নামোল্লেখ হইয়াছে, তাহা বাদে আরও অনেক পয়গম্বর আছেন, যাহাদের নাম হজরত মোহাম্মদ (দঃ) কে জ্ঞাত করা হয় নাই। অধিকন্তু প্রত্যেক দেশ ও প্রত্যেক জাতির নিকট প্রেরিত পুরুষগণ আসিয়াছেন ও স্বর্গের বাণী শুনাইয়াছেন, এই সমস্ত কথা প্রত্যেকটিই কোরআন শরীফের স্পষ্ট আয়াৎ দ্বারা প্রতিপন্ন হইতেছে। সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা মিসিস মহোদয়ার মন্তব্যের পূর্ণ সমর্থন করিতেছি। (আল এসলাম-সম্পাদক)।