পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মতিচূর : দ্বিতীয় খণ্ড ১৫৭

ঠিক এই সময় তাহার বালক ভৃত্য একটি আর্জেণ্ট টেলিগ্রাম আনিয়া দিল। ভাইজান পাঠ করিলেন; লক্ষ্ণৌ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ লিখিয়াছেন, “কবর প্রস্তুত রাখ, নার্স নেলীর শবদেহ (পরিত হইল।”

শিশু-পালন[১]

উপস্থিত ভদ্রমহিলাগণ!

চোখের উপর নিত্য যে মহামারী বিশেষতঃ শিশুহত্যা দেখতে পাওয়া যায় সে সম্বন্ধে দু'চার কথা বলা আবশ্যক মনে করি। ভাবিবার বিষয়:—গত বৎসর কেবল বাংলাদেশে ষোল লক্ষ, একচল্লিশ হাজার, একশত এগার জন লোক মারা গেছে—তার মধ্যে দশ বছরের কম বয়সের ছেলে মেয়ে ছয় লক্ষ, চব্বিশ হাজার, সাত শ’ পঞ্চান্ন জন ছিল। ঐ সোয়া ছয় লক্ষ ছেলের মধ্যে এক বছরের কম বয়সের শিশু দুই লক্ষ আটাত্তর হাজার তিন শ' সত্তর জন ছিল। ফল কথা, সাড়ে ষোল লক্ষ লোকের তিন ভাগের একভাগ ছেলেমেয়ে ছিল। ছেলে মেয়ে নিয়েই ত ভবিষ্যৎ—তারা যদি এমন হুহু করে মরে যাবে, তবে আমাদের আর থাকবে কি? আর সব জায়গার বিষয় ছেড়ে শুধু কলিকাতায় দেখছি গত বৎসর ৬০০০ অর্থাৎ দৈনিক ১৬ জন করে আঁতুড়ে শিশু মারা গেছে। যদি যত্ন করা যেত তা হলে রোজ ১৪ জন করে ছেলে বাচান যেতে পারত। ২৫ বৎসর আগে এই সহরে যত ছেলে জন্মাত তার শতকরা ৫০ জন শিশু এক বৎসরের মধ্যেই মারা যেত। ১৮৯৫ সনে শতকরা ৪৮ জন ছেলে মরেছে। তারপর সহরের জলবায়ুর কিছু উন্নতি হয়ে ১৯০০ সনে শতকরা ৪৪ জন করে মরেছে। আর গত বছর শতকরা ৩০/৪০ জন করে মরেছে। তার মধ্যে রোজ ১৪ জন করে শিশু কেবল মা ও ধাইয়ের অযত্নে বলি দেওয়া হয়েছে। অযত্নে ছেলে মারা হয়েছ, এর অর্থ এই যে পোয়াতিরা ঠিক মত যত্ন করতে জানে না। কারণ যাই হউক, এ রকম শিশু হত্যা ত সহজ নয়, এর প্রতিকার করতে হবে।

 আমাদের মনে একটা ভ্রান্ত ধারণা জন্মাচ্ছে যে পুরাকালে আমাদের অতিবৃদ্ধা ঠাকুমা, দিদিমারা যা করেছেন, সে সব ব্যবস্থা মন্দ ছিল, তার কিছুই ভাল নয়। সেই জন্য তার উল্টো করতে হবে। একটু পরিষ্কার করে বলি, ধরুন, যেমন দিদিমার আমলে হিন্দু পোয়াতিকে ৯ দিন থেকে ২১ দিন আর মুসলমান পোয়াতিকে ৪০ দিন আঁতুড় ঘরে বন্ধ থাকতে হতো, এখন তার উল্টো রতে গিয়ে দুই দিনের পোয়াতি (প্রসূতি) মোটর গাড়ীতে গড়ের মাঠে হাওয়া, খেতে বেরোবে বা সংসারের কাজ কর্মে হাত দিবে; আমাদের পূর্ব পুরুষেরা বোকা ছিলেন না; তাহারা যা ব্যবস্থা করেছিলেন, সেটা নিখুঁৎ ছিল, তাই তারা নির্বিবাদে ৯০/৯৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত বেঁচে গেছেন। এখন ত আমাদের বয়স না হতে কুড়ি আগে পাকে কেশ!” দশ বছর বয়সেই চশমা পরতে হয়। মাঝখান থেকে আমরা সেই


  1. বিগত ৬ই এপ্রিল ১৯২০ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতা টাউন হলে স্বাস্থ্য ও শিশু প্রদর্শনীতে পঠিত হয়। সর্বসাধারণের বোধগম্য করিবার নিমিত্ত প্রবন্ধটি অতি সহজ ও সরল ভাষায় লিখিতে বাধ্য হইলাম।