পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/১৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬২ রোকেয়া রচনাবলী

বাপকেও একটা আলাদা বৃত্তি দেওয়া হয়। ফল কথা, ইউরোপ মানুষ রক্ষা সম্বন্ধে সাবধান হয়েছেন, এখন আমাদের সাবধান হবার পালা।

 আমার মনে হয়, এ শিশু মহামারীর আর একটা বিশেষ কারণ আমাদের দেশের বাল্যবিবাহ। ডাক্তার ভারতচন্দ্র বলেছেন, “মায়ের কর্তব্য না শিখে কেউ যেন মা না হয়। যে নিজেই ১২/১৩ বছরের বালিকা, সে আর কর্ত্তব্য শিখতে সময় পেলে কখন? উক্ত ডাক্তার মহাশয়ের মতে কুড়ি বছর বয়সের আগে মেয়ের বিবাহ দিতে নাই।

 মেয়েদের শরীর যাতে ভাল থাকে, সেদিকেও নজর রাখা দরকার। বালিকা স্কুলে মেয়েদের শরীর ভাল রাখবার জন্য ব্যায়াম করার ব্যবস্থা আছে বটে, তাত কাজে পরিণত করবার যোটি নেই। কারণ ছাত্রীর মা বাপ ড্রিল করতে বারণ করেন। মেয়েরা ১২ বছর বয়স পর্য্যন্ত জড়ভরত হয়ে বসে থাকবে, তারপর তাদের বিয়ে হবে; ফল—ছেলে বাচে না, কপাল মন্দ!

 আপনারা শুনে আশ্চর্য্য হবেন, আজ আিবলছি, তা এই প্রথম বলা নয়। আমি ১৪ বছর পূর্ব্বে বলেছিলাম “যারা কন্যার ব্যায়াম করা অনাবশ্যক মনে করেন, তারা দৌহিত্রকে হৃষ্টপুষ্ট “পাহলওয়ান” দেখিতে চাহেন কিনা? ... যদি সেরূপ ইচ্ছা করেন, তবে বোধ হয়, তারা সুকুমারী-গোলাপ লতিকায় কাঁটাল ফলাইতে চাহেন!” ইত্যাদি। (মতিচূর প্রথম খণ্ড ৪৯ পৃষ্ঠা)। যাহা হউক, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশরক্ষার জন্য দুটি বিষয় দরকারী হয়ে পড়েছে। দেখছি। প্রথম স্ত্রীশিক্ষার বহুল প্রচার; দ্বিতীয় বাল্যবিবাহ রহিত করা। অর্থাৎ মেয়েদের বেশ করে পড়ালেখা শিখাতে হবে, যাতে তারা নিজের শরীরের যত্ন করতে শিখে; আর অল্প বয়সের ছেলেমেয়ের বিয়ে বন্ধ করতে হবে। আপনারা ভেবে দেখেছেন, সধবা মেয়েমানুষ বেশীর ভাগ মরে কেন? কারণ তাদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয় বলে। এখন দেখছি, শিশু রক্ষা করতে হ'লে আগে শিশুর মা’দের রক্ষা করা দরকার। ভাল ফসল পেতে হলে গাছে সার দেওয়া দরকার। বুঝলেন? মেয়েদেরও খাওয়া দাওয়ার একটু যত্ন করবেন। মেয়ের বিয়েতে অনেক টাকা খরচ করতে হয় বলে বেচারীদের শুকিয়ে মারবেন না। তারাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ গৃহের গৃহিণী; তারাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ বংশধরের জননী।

মুক্তিফল
(রূপকথা)

কাঙ্গালিনী বহুদিন হইতে পীড়িতা। তাঁহার জীবন প্রদীপ ধীরে ধীরে নিবিয়া আসিতেছে। কাঙ্গালিনী বুঝি এখন মরেন। অর্থাভাবে তাহার চিকিৎসা হইতে পারে না,—চিকিৎসা দূরে থাকুক, দিনান্তে একবার আহার্য্যও জোটে না; একমাত্র জীর্ণকম্বা দারুণ শীত ও লজ্জা নিবারণের সম্বল। যিনি এক কালে ভোলাপুরের রাণী ছিলেন, তিনি অদ্য কাঙ্গালিনী!

 কাঙ্গালিনী তরুতলে শ্যামল দুর্বাশয়নে শায়িতা, অসংখ্য মশা মাছি তাহার ক্ষত অঙ্গ বেষ্টন করিয়া তাহাকে বিরক্ত করিতেছে, তিনি রোগে ভুগিয়া এত দুর্বল হইয়াছেন যে মশা মাছিও তাড়াইতে পারেন না। তাঁহার বালক পুত্র নবীন তাঁহার পার্শ্বে বসিয়া আছে। সে কখন