পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮০ রোকেয়া রচনাবলী

 কাঙ্গালিনী। অভাগীর মেয়ে! তোরা জানিস, মুক্তিফল না পাইলে আমি শাপমুক্ত হইব, তবে আমাকে শুধু প্রাণে বাঁচাইয়া রাখিয়া বৃথা কষ্ট দিস কেন?

 নবীন। মাগো! তুমি রাগ করিও না। আমি মুক্তিফল আনিতে আবার চেষ্টা করিব। এবার কৈলাসে উঠিতে পারি নাই, পুনরায় আরোহণের চেষ্টা করিব।

 শ্রীমতী ও সুমতি। এবার আমরাও সঙ্গে যাইব, পথ কি বড় দুর্গম? নবীন। একেবারে দুর্গম নয়, কতক দূর মই দিয়া উঠা যাইতে পারে—

 শ্রীমতী। বুঝিয়াছি, থাক মইয়েরও প্রয়োজন নাই। চল নবীন, শীঘ্র; আর কালবিলম্ব করা উচিত নয়।

 নিন্দুক। অবাক করিলে শ্রীমতী,নবীন ত তবু মই সংগ্রহ করিয়াছে, তুমি তাহার উপরও নির্ভর কর না!

 শ্রীমতী। কেন দাদা, আপনার পায়ের উপর নির্ভর করিব! পার্বত্য লতাগুল্ম ধরিয়া উঠিব, তাহাতে না কুলাইলে হামাগুড়ি দিয়া, বুকে ভর দিয়া—যে কোন প্রকারে হউক, উঠিব।

 প্রবীণ। যেখানে পর্ব্বত অত্যন্ত ঢালু সে স্থান অতিক্রম করিবে কিরূপে? নিন্দুক। সেখানে উভয় ভগিনী উড়িতে চেষ্টা করিবে!

 সুমতি। এত বিদ্রুপ কর কেন দাদা? কোন উপায় ত হইবেই। এ জগতে কিছুই স্থায়ী নয়; হয় আরোগ্য নয় মৃত্যু—কিন্তু রোগ চিরকাল থাকে না!

 ধীমান। কেবল কথায় কাজ নাই, এখন সকলে মিলিয়া আবার যাত্রা করি। প্রবীণ। হ চল, দুই একখানা আবেদন সঙ্গে লইয়া আমিও আসিতেছি। | শ্রীমতী। আমি এই চুল খুলিলাম,আমরা সকলে জননীকে মুক্তিফল আনিয়া দিতে না পারা পর্য্যন্ত আমি আর চুল বাঁধিব না! হে প্রভূ পরমেশ্বর! সহায় হও!

 কাঙ্গালিনী। একি দেখি, আমার কোমলাঙ্গী ননির পুতুল দুহিতা ক্ষুদ্র স্বার্থে, সাংসারিক ভোগবিলাসে জলাঞ্জলি দিয়া আমার সেবায় নিযুক্তা হইল! শ্রীমতী ও সুমতি যখন তাহাদের ভ্রাতাদের কার্য্যে যযাগদান করিতে বদ্ধপরিকর হইল, তখন আমার ভরসা হয় সম্ভবতঃ আমার সুদীর্ঘ নিরাশযামিনী হইবে!—এত দিনে হয়ত আমার সন্তান সন্ততি মুক্তিফল আনিতে পারিবে আশা মায়াবিনী।

সৃষ্টি তত্ত্ব

সে দিন গল্প করিতে করিতে আমাদের অধিক রাত্রি হইয়া গিয়াছিল। আমাদের আলোচ্য বিষয় ছিল, জিন, পরী, ভূত। কেহ শ্বেতশ্মশ্রু জিনকে নামাজ পড়িতে দেখিয়াছেন; কেহ দেখিয়াছেন সিতবসনা পরী এবং কেহ ভূতকে মাছভাজা খাইতে দেখিয়াছেন! মিস ননীবালা দত্ত ঘুমাইয়া পড়িলেন; আমি একটা সোফায় বসিয়াছিলাম। জাহেদা বেগম আমাকে শয়ন করিতে অনুরোধ করিয়া ল্যাম্প নিবাইয়া আপন কামরায় চলিয়া গেলেন। শিরীন বেগম