পাতা:রোকেয়া রচনাবলী.pdf/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৪ রোকেয়া রচনাবলী
উনিশ

জনৈক রেলপথে ভ্রমণকারীর বৃত্তান্তের সারাংশ এইঃ ষ্টেশনে টিকিট কেটে মনে মনে একটা হিসেব করলাম। তিনখানা ইণ্টার কাসের দরুন দেড় মণ জিনিষ নিতে পারবো, কিন্তু আমাদের জিনিষপত্তর ওজন করিলে পাঁচ মণের কম কিছুতেই হবে না। অনেক ভেবে-চিন্তে লগেজ না করাই ঠিক করলাম। মেয়েদের গাড়ীতে জিনিষপত্তর তুলে দিলে আর কে চেক করতে আসবে?

 খোকা জিজ্ঞেস করলে,—তোমার সঙ্গে কোন জ্যান্ত লগেজ আছে নাকি?

 আবার আছে না কি! একেবারে এক জোড়া! একে বুড়ী, তায় আবার থুড়থুড়ি।

 খোকা বল্লে-তবেই সেরেছে।

 যখন ঘুম ভাঙল, তখন বেশ রাত হয়েছে।

 অনুমানে বুঝলাম, একটা বড় ষ্টেশনে গাড়ী থেমে আছে। হঠাৎ মনে হ’ল, বহরমপুর হবে হয়ত। দরজাটা খুলে নামতে যাব, এমন সময় মনে হ’ল যেন শুনতে পেলাম, আমারই নাম ধরে কারা ডাকাডাকি করছে-“ও টুনু-টুনু, এতো ভারী বিপদে আজ পড়লাম, -টুনুরে!”

 একে মেয়েলী গলা, তার ওপর আবার করুণ। আমি ব্যস্ত হয়ে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম। দেখলাম, দুই বুড়ী মাটিতে দাঁড়িয়ে মহা কান্নাকাটি শুরু করেছে, আর জিনিসপত্তর গুলোও সব নামানো হয়েছে। চারদিকে তিন চার জন কুলী ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

 আমার মেজাজ গরম হয়ে উঠল। টি·টি·সি অর্থাৎ চেকারগুলো যে রাত্রিবেলা মেয়েদের গাড়ী চেক ক’রে-মালপত্তর সব নামিয়ে দেবে এতো কম অন্যায় কথা নয়। আমি কুলীগুলোকে খুব বকে দিলাম, জিনিষ-পত্তর আবার গাড়ীতে তুলে দিতে বল্লাম। আর একবার কুলীগুলোকে এক চোট বকে দিলাম, এবং টি· টি· সি·দের নামে যে রিপোর্ট করতে হবে, সে রকমও অনেক কথা বল্লাম।

 ঠাকুরমা কেঁদে বল্লেন, “আরে টুনু, আমরা যে এসে পড়েছি।”

 অবশেষে একটা কুলী সাহস করে বল্লে, “বাবু ঘাট আ গিয়া।”

 আমি ঠাকুরমাকে বল্লাম,—তাহলে টি· টি· সি· চেক করে নামিয়ে দেয়নি-ঘাটে পড়েছে; সে কথা আমাকে আগে বল্লেই হত, এ জন্য কান্নাকাটি কেন?


বিশ

জনৈকা পাঞ্জাবী বেগম সাহেবা নিন্মলিখিত গল্প কোন উর্দ্দু কাগজে লিখিয়াছেনঃ

 আমরা একটা গ্রামে কিছুকাল ছিলাম। একবার তত্রত্য কোন সম্ভ্রান্ত লোকের বাড়ীতে আমাদের নিমন্ত্রণ ছিল। সেখানে গিয়া কুমারী মেয়েদের প্রতি যে অত্যধিক জুলুম হইতে দেখিলাম, তাহাতে আমি প্রাণে বড় আঘাত পাইলাম।