পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
লঘুগুরু

সহিত বখরার বন্দোবস্ত হইতে পারে। অবশ্য প্রথম হইতেই জীবিকানির্বাহের উপযোগী লাভ হইবে না। কলেজে উচ্চশিক্ষা বা কার্যকরী বিদ্যা লাভ করিতে যে সময় লাগে, ব্যবসায় দাঁড় করাইতে তাহা অপেক্ষা কম সময় লাগিবে এরূপ আশা করা অসংগত। প্রথমে যে ছোট কারবার আরম্ভ হইবে তাহা হাতেখড়ি বলিয়াই গণ্য করা উচিত। তাহার পর অভিজ্ঞতা ও আত্মনির্ভরতা জন্মিলে কারবার সহজেই বৃদ্ধি পাইবে।

 এইপ্রকার শিক্ষার জন্য এবং সামান্য মূলধনে ব্যবসায় আরম্ভ করিতে হইলে যে কষ্টসহিষ্ণুতা আবশ্যক, শৌখিন বাঙালীর ধাতে তাহা সহিবে কি? নিশ্চয় সহিবে। বাঙালী যুবক অশেষ পরিশ্রম করিয়া রাত জাগিয়া মড়া ঘাঁটিয়া ডাক্তারি শেখে। উত্তপ্ত লোহার ঘরে জ্বলন্ত হাপরের কাছে লোহা পিটিয়া এঞ্জিনিয়ারিং শেখে। প্রখর রৌদ্রে মাঠে মাঠে ঘুরিয়া ক্ষুধা তৃষ্ণা দমন করিয়া সার্ভেয়িং শেখে। আইনপরীক্ষা পাস করিয়া বহু দিন মুরব্বী উকিলের বাড়িতে ধরনা দেয়। ভোরে অর্ধসিদ্ধ ভাত খাইয়া ডেলি-প্যাসেঞ্জার হইয়া সমস্ত দিন অফিসে কলম পিশিয়া বাড়ি ফেরে। এসকল কাজকে সে শ্লাঘ্য বা ভদ্রোচিত মনে করে সেজন্য কষ্ট সহিতে পারে। যেদিন সে বুঝিবে যে বণিগ্বৃ‌ত্তি হীন নয়, ইহাতে অতি উচ্চ আশা পূরণেরও সম্ভাবনা আছে, সেদিন সে এই বৃত্তির জন্য কোনও কষ্ট গ্রাহ্য করিবে না।