পাতা:লঘুগুরু প্রবন্ধাবলী - রাজশেখর বসু.pdf/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



রস ও রুচি

 ঋগ্বে‌দের ঋষি আধ-আধ ভাষায় বললেন-“কামস্তদগ্রে সমবর্তাধি’—অগ্রে যা উদয় হ’ল তা কাম। তারপর আমাদের আলংকারিকরা নবরসের ফর্দ করতে গিয়ে প্রথমেই বসালেন আদিরস। অবশেষে ফ্রয়েড সদলবলে এসে সাফ সাফ ব’লে দিলেন—মানুষের যাকিছু শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যসৃষ্টি, কমনীয় মনোবৃত্তি, তার অনেকেরই মূলে আছে কামের বহুমুখী প্রেরণা।

 সেদিন কোনও মনোবিদ্যার বৈঠকে একটি প্রবন্ধ শুনেছিলাম—রবীন্দ্রনাথের রচনার সাইকোঅ্যানালিসিস। বক্তা পরমশ্রদ্ধাসহকারে রবীন্দ্রসাহিত্যের হাড় মাস চামড়া চিরে চিরে দেখাচ্ছিলেন কবির প্রতিভার মূল উৎস কোথায়। কবি যদি সেই ভৈরবীচক্রে উপস্থিত থাকতেন তবে নিশ্চয় মূর্ছা যেতেন, আর মূর্ছান্তে ছুটে গিয়া কোনও স্মৃতিভূষণকে ধরে প্রায়শ্চিত্তের ব্যবস্থা নিতেন।

 কি ভয়ানক কথা! আমরা যাকিছু স্পৃহণীয় বরেণ্য পরম উপভোগ্য মনে করি তার অনেকেরই মূলে আছে একটা হীন রিপু! ফ্রয়েডের দল খাতির করে তার নাম দিয়েছেন ‘লিবিডো’, কিন্তু বস্তুটি লালসারই একটি বিরাট রূপ। তাও কি সোজাসুজি লালসা? তার শতজিহ্বা শতদিকে লকলক করছে, সে দেবতার ভোগ শকুনির উচ্ছিষ্ট একসঙ্গেই চাটতে