পাতা:লালন-গীতিকা.djvu/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভূমিকা le/o বিষয়ক। আমরা দেখিতে পাই, খ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে অবলম্বন করিয়া ষোড়শ শতাব্দীতে বাঙলা দেশে বৈষ্ণব ধর্ম ও সাহিত্যের যে অভিনব প্রসার ঘটিয়াছিল তাহারই ফলে পরবর্তী কালে রাধাকৃষ্ণের লীলা অথবা শ্ৰীগৌরাঙ্গের লীলা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বাঙলার জনগণের নিকটে একটা সামাজিক উত্তরাধিকাররূপে দেখা দিয়াছিল ; তাহার ফলে অসংখ্য হিন্দু কবির সঙ্গে বহুসংখ্যক মুসলমান কবিও এই কৃষ্ণলীলা বা গৌরাঙ্গলীলার গান করিয়াছেন। লালন ফকিরের রচিত এইজাতীয় গানগুলির মধ্যে আমরা সেই সত্যেরই সমর্থন লাভ করি । বাউল গানগুলির মধ্যে আবার দুইটি দিক্‌ আছে ; একটি হইল সর্বপ্রকার সংস্কার-প্রথার বাহিরে একান্ত সহজভাবে রূপের মধ্যে অরূপের—সীমার মধ্যে অসীমের—সন্ধানের দিক। এই দিকটিই রবীন্দ্রনাথ এবং আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন মহাশয় প্রভৃতিকে বাউলগানের প্রতি আমনভাবে আকৃষ্ট করিয়াছিল। এই যে রূপের খাচার মধ্যে একটি অধরা অচিন পাখীর আসা-যাওয়ার রহস্ত-রক্তমাংসের মানুষের ভিতরেই যে আর একটি ‘মনের মানুষের অবস্থান—ইহার আভাসই বাউল-সঙ্গীতকে আধুনিক কালে এত জনপ্রিয় করিয়৷ তুলিয়াছে। কিন্তু এই ভাবদ্ধৃষ্টির পশ্চাতে বাউল গণের কতকগুলি গুহ সাধনপদ্ধতিরও সন্ধান পাওয়া যায় এই গানগুলির ভিতরে ; সেই গুহ সাধনপদ্ধতির আলোকে বাউল-গানের বিশদ আলোচনা করিয়াছেন অধ্যাপক ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য মহাশয় তাহার ‘বাংলার বাউল ও বাউল গান’ নামক স্ববৃহৎ গ্রন্থে। বর্তমান সঙ্কলন-গ্রন্থের সম্পাদকগণ গানগুলির অর্থবোধের সুবিধার জন্য একটি ‘অর্থ-সংকেত যোজনা করিয়াছেন মাত্র ; তত্ত্ব ও সাধনার বিশদ আলোচনায় তাহারা প্রবৃত্ত হন নাই। বাঙলার সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ বাউল লালন শাহ, ফকিরের সর্বাপেক্ষ। অধিকসংখ্যক গান পাঠক সাধারণের গোচর করিয়৷ তোলাই তাহাদের মুখ্য লক্ষ্য। সমগ্র গানগুলি পাঠক সাধারণের গোচর হইলে লালন শাহ ফকিরের সামগ্রিক রূপটির পরিচয় গ্রহণ সম্ভব হইয়া উঠিবে।