বর্ষামেঘের ছায়া দুই সার বাড়ির মধ্যে ঘন হয়ে ওঠে, কে যেন গলির খাতা থেকে তার আলোটাকে পেন্সিলের আঁচড় দিয়ে কেটে দিয়েচে। বৃষ্টির ধারা শানের উপর দিয়ে গড়িয়ে চলে, বর্ষা ডমরু বাজিয়ে যেন সাপ খেলাতে থাকে। পিছল হয়, পথিকদের ছাতায় ছাতায় বেধে যায়, ছাদের উপর থেকে ছাতার উপরে হঠাৎ নালার জল লাফিয়ে পড়ে’ চম্কিয়ে দিতে থাকে।
গলিটা অভিভূত হয়ে বলে, “ছিল খট্খটে শুক্নো, কোনো বালাই ছিল না। কিন্তু কেন অকারণে এই ধারাবাহী উৎপাত?”
ফাল্গুনে দক্ষিণের হাওয়াকে গলির মধ্যে লক্ষ্ণীছাড়ার মতো দেখ্তে হয়; ধুলো আর ছেঁড়া কাগজগুলো এলোমেলো উড়্তে থাকে। গলি হতবুদ্ধি হয়ে বলে, “এ কোন্ পাগ্লা দেবতার মাৎলামি!’”
তার ধারে ধারে প্রতিদিন যে-সব আবর্জনা এসে জমে—মাছের আঁশ, চুলোর ছাই, তরকারির খোসা, মরা ইঁদুর—সে জানে এই সব হচ্চে বাস্তব। কোনোদিন ভুলেও ভাবে না, “এ সমস্ত কেন?”
অথচ, শরতের রোদ্দুর যখন উপরের বারান্দায় আড় হয়ে পড়ে, যখন পূজোর নহবত ভৈরবীতে বাজে, তখন ক্ষণকালের জন্যে তার মনে হয়, “এই শান-বাঁধা লাইনের বাইরে মস্ত একটা কিছু আছে বা!”