রামী। বসন্তানিল স্পর্শে অঙ্গ সিহরিয়া উঠে।
বামী। গায়ে কাপড় না থাকিলে উত্তুরে বাতাসেও গায়ে কাঁটা দিয়া উঠে।
রামী। মর্ ছুঁড়ি, বসন্তকালে কি উত্তুরে বাতাস বয় যে, আমি বসন্তবর্ণনায় উত্তুরে বাতাসের কথা বলিব?
বামী। উত্তুরে বাতাসই এখন বয়। দেখ, এখনকার যত ঝড়, সব উত্তুরে। আমার বোধ হয়, বসন্তবর্ণনে উত্তুরে বাতাসের প্রসঙ্গ করাই উচিত। আইস, আমরা বঙ্গদর্শনে লিখিয়া পাঠাই যে, ভবিষ্যতে কবিগণ বসন্তবর্ণনে মলয় বাতাস ত্যাগ করিয়া উত্তুরে ঝড়ের বর্ণনা করেন।
রামী। তাহা হইলে বিরহীদের কি উপায় হইবে? তাহারা কি লইয়া কাঁদিবে?
শ্যামী। সখি, তবে থাক। এক্ষণে তোমার বসন্তবর্ণনা——উহুঃ উহুঃ সখি। মোলেম, মোলেম, গেলেম রে! গেলেম রে! [ভূমে পতন, চক্ষু মুদিত]
রামী। কেন, কেন, সই, কি হয়েছে? হঠাৎ অমন হলে কেন?
শ্যামী। (চক্ষু বুজিয়া) ঐ শুনিলে না? ঐ সেওড়া গাছে কোকিল ডাকিতেছে।
রামী। সখি, আশ্বস্তা হও, আশ্বস্তা হও,—তোমার প্রাণকান্ত শীঘ্রই আসিবেন। সই, আমারও ঐরূপ যন্ত্রণা হইতেছে। নাথের সন্দর্শন ভিন্ন আমার বাঁচা ভার হইয়া উঠিয়াছে। (চক্ষু মুছিয়া) পাড়ার সকল পুকুরের যদি জল না শুকাইত, তবে এত দিন ডুবিয়া মরিতাম। হে হৃদয়-বল্লভ, জীবিতেশ্বর! হে রমণীজনমনোমোহন! হে নিশাশেষোন্মেষোন্মুখকমলকোরকোপমোত্তেজিতহৃদয়সূর্য্য। হে অতলজলদলতলন্যস্তরত্নরাজিবন্মাহামূল্যপুরুষরত্ন! হে কামিনীকণ্ঠবিলম্বিতরত্নহারাধিক প্রাণাধিক! আর প্রাণ বাঁচে না। আমি অবলা, সরলা, চঞ্চলা, বিকলা, দীনা, হীনা, ক্ষীণা, পীনা, নবীনা, শ্রীহীনা,—আর প্রাণ বাঁচে না। আর কত দিন তোমার আশাপথ চাহিয়া থাকিব? যেমন সরোবরে সরোজিনী ভানুর আশা করে, যেমন কুমুদিনী কুমুদবান্ধবের আশা করিয়া থাকে, যেমন চাতক মেঘের জলের আশা করিয়া থাকে—আমি তেমনি তোমার আশা করিতেছি।
শ্যামী। (কাঁদিতে কাঁদিতে) যেমন রাখাল, হারাণ গোরুর আশায় দাঁড়াইয়া থাকে, যেমন বালকে ময়রার দোকান হইতে লোক ফিরিবার আশায় দাঁড়াইয়া থাকে, যেমন অশ্ব তৃণাহরক গ্রাসকটের আশা করিয়া থাকে, হে প্রাণবন্ধো! আমি তেমনি তোমার আশা করিয়া আছি। যেমন মাছ ধুইতে গেলে পরিচারিকার পশ্চাৎ পশ্চাৎ মার্জ্জার গমন করে, তেমনি তোমার পশ্চাৎ পশ্চাৎ আমার মন গিয়াছে। যেমন