পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেভুলানো ছড়া 8\○ করেন না। কিন্তু সর্বাপেক্ষ ভালোবাসার স্বেচ্ছাচারিতা প্রকাশ পায় যখন সে আড়ম্বর-পূর্বক যুক্তির অবতারণা করিয়া ঠিক শেষ মুহূর্তে তাহৰে অবজ্ঞাভরে পদাঘাত করিয়া ভাঙিয়া ফেলে। নিম্নে তাহার একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতেছে । চাদ কোথা পাব বাছা, জাদুমণি' মাটির চাদ নয়ট গড়ে দেব গাছের চাদ নয়ই পেড়ে দেব— তোর মতন চাদ কোথায় পাব। তুই চাদের শিরোমণি । ঘুমো রে আমার খোকামণি । চাদ আয়ত্তগম্য নহে, চাদ মাটির গড়া নহে, গাছের ফল নহে, এ-সমস্তই বিশুদ্ধ যুক্তি, অকাট্য এবং নৃতম— ইহার কোথাও কোনো ছিদ্র নাই। কিন্তু এতদূর পর্যন্ত আসিয়া অবশেষে যদি খোকাকে বলিতে হয় যে তুমিই চাদ এবং তুমি সকল চন্দ্রের শ্রেষ্ঠ, তবে তো মাটির চাদও সম্ভব, গাছের চাদও আশ্চর্য নহে। তবে গোড়ায় যুক্তির কথা পাড়িবার প্রয়োজন কী ছিল ? এইখানে বোধ করি একটি কথা বলা নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিক হইবে না। স্ত্রীলোকদের মধ্যে যে বহুল পরিমাণে যুক্তিহীনতা দেখা যায় তাহা বুদ্ধিহীনতার পরিচয় নহে । তাহারা যে জগতে থাকেন সেখানে ভালোবাসারই একাধিপত্য । ভালোবাসা স্বগের মানুষ । সে বলে, আমার অপেক্ষ আর কিছু কেন প্রধান হইবে ? আমি ইচ্ছা করিতেছি বলিয়াই বিশ্বনিয়মের সমস্ত বাধা কেন অপসারিত হইবে না ? সে স্বপ্ন দেখিতেছে এখনো সে স্বৰ্গেই আছে। কিন্তু হায়, মর্ত-পৃথিবীতে স্বর্গের মতো ঘোরতর অযৌক্তিক পদার্থ ৪ নয়=নাহয়, নহে যে —এরূপ বিভিন্ন অর্থ হইতে পারে