পাতা:লোকসাহিত্য - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ومن ۹ সাহিত্যে সেই কথা সকল মানুষ শুনিয়া আসিতেছে। সাহিত্যের সমলোচনাকেই সমালোচনা বলা হইয়া থাকে, কিন্তু অধিকাংশ সাহিত্যই প্রকৃতি ও মানবজীবনের সমালোচনা মাত্র। প্রকৃতি সম্বন্ধে, মহন্ত সম্বন্ধে, ঘটনা সম্বন্ধে কবি যখন নিজের আনন্দ বিষাদ বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং র্তাহার নিজের সেই মনোভাব কেবলমাত্র আবেগের দ্বারা ও রচনাকৌশলে জন্যের মনে সঞ্চারিত করিয়া দিবার চেষ্টা করেন, তখন তাহাকে কেহ অপরাধী করে না । তখন পাঠকও অহমিকা-সহকারে কেবল এইটুকু দেখেন ষে ‘কবির কথা আমার মনের সহিত মিলিতেছে কি না” । কাব্য-সমালোচক ও ৰদি যুক্তিতর্ক এবং শ্রেণীনির্ণয়ের দিক ছাড়িয়া দিয়া কাব্যপাঠ-জাত মনোভাব পাঠকগণকে উপহার দিতে উদ্যত হন তবে সেজন্য র্তাহাকে দোষী করা উচিত হয় না । বিশেষত আজ আমি যে কথা স্বীকার করিতে বসিয়াছি তাহার মধ্যে আত্মকথার কিঞ্চিৎ অংশ থাকিতেই হইবে । ছেলেভুলানো ছড়ার মধ্যে আমি ষে রসাস্বাদ করি ছেলেবেলাকার স্মৃতি হইতে তাহাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখ৷ আমার পক্ষে অসম্ভব। সেই ছড়াগুলির মাধুর্ব কতটা নিজের বাল্যস্মৃতি এবং কতটা সাহিত্যের চিরস্থায়ী অাদর্শের উপর নির্ভর করিতেছে তাহা নির্ণয় করিবার উপযুক্ত বিশ্লেষণশক্তি বর্তমান লেখকের নাই। এ কথা গোড়াতেই কবুল করা ভালো । r ‘বৃষ্টি পড়ে টাপুর-টুপুর নদী এল বান’ এই ছড়াটি বাল্যকালে আমার নিকট মোহমন্ত্রের মতো ছিল এবং সেই মোহ এখনো আমি ভুলিতে পারি নাই। আমি আমার সেই মনের মুগ্ধ অবস্থা স্মরণ করিয়া না দেখিলে স্পষ্ট বুঝিতে পারিব না ছড়ার মাধুর্ঘ এবং উপযোগিতা কী। বুঝিতে পারিব না, কেন এত মহাকাব্য এবং খণ্ডকাব্য, এত তত্ত্বকথা এবং নীতিপ্রচার, মানবের এত প্রাণপণ প্রযত্ন, এত গলদঘর্ম ব্যায়াম প্রতিদিন ব্যর্থ এবং বিস্তৃত