পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত মুখে ফুটবে—কিন্তু কষ্ট গ্রহকেও শান্ত করা যায়, তার ক্রিয়া আছে—সামান্য দশ-কুড়ি টাকা খরচের ব্যাপার মাত্র । তুমি আমাদের কলকাতার বাড়িতে যেতে পার ? কেন পারব না মা, নিয়ে গেলেই পারি। আচ্ছা । দেখিলাম তাহার গ্রহের কোপের প্রতি পুরা বিশ্বাস আছে, কিন্তু তাহাকে প্রসন্ন করার সম্বন্ধে যথেষ্ট সন্দেহ । কমললত বলিল, চল গোসাই, তোমার চা তৈরী করে দিই গে—খাবার সময় হয়েচে । রাজলক্ষ্মী কহিল, আমি তৈরী করে আনচি দিদি, তুমি ওঁর বসবার জায়গাট একটু ঠিক করে দাও গে । রতনকে বলো তামাক দিতে । কাল থেকে তার ছায়। দেখবার জো নেই । অন্যান্য সকলে গণৎকার লইয়া কলরব করিতে লাগিল, আমরা চলিয়া আসিলাম । দক্ষিণের খোলা বারান্দায় আমার দড়ির খাট, রতন ঝাড়িয়া-ঝুড়িয়া দিল, তামাক দিল, মূখহাত ধোয়ার জল আনিয়া দিল—কাল সকাল হইতে বেচারার খাটুনির বিরাম নাই, অথচ কত্রী বলিলেন তাহার ছায়া পৰ্য্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। ফাড়া আমার আসন্ন, কিন্তু রতনকে জিজ্ঞাসা করিলে সে নিশ্চয় বলিল, আজ্ঞে না, ফাড় আপনার নয়—আমার । কমললত নীচে বারান্দায় বসিয়া গহরের সংবাদ জিজ্ঞাসা করিতেছিল, রাজলক্ষ্মী চা লইয়া আসিল, মুখ অত্যন্ত ভারী, স্বমুখের টুলে বাটিটা রাখিয়া দিয়া কহিল, দ্যাথো, তোমাকে একশোবার বলেচি বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়িয়ে না—বিপদ ঘটতে কতক্ষণ ? তোমাকে গলায় কাপড় দিয়ে হাতজোড় করচি, কথাটা আমার শোনো । এতক্ষণ চা তৈরী করিতে বসিয়া রাজলক্ষ্মী বোধ হয় ইহাই ভাবিয়া স্থির করিয়াছিল। ‘খুব শীঘ্র অর্থে আর কি হইতে পারে ? কমললতা আশ্চর্য্য হইয়া কহিল, বনেজঙ্গলে গোসাই আবার কখন গেল ? রাজলক্ষ্মী বলিল, কখন গেলেন সে কি আমি দেখে রেখেচি দিদি ? আমার কি সংসারে আর কাজ নেই ? আমি বলিলাম, ও দেখেনি, ওর অনুমান গণক ব্যাটা আচ্ছা বিপদ ঘটিয়ে গেল। শুনিয়া রতন আর একদিকে মুখ ফিরাইয়া একটু দ্রুতপদেই প্রস্থান করিল। ১৯t