পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰই মুখ তুলিয়া কঠিনভাবে জবাব দিল, পছন্দ কেন হবে না ঠাকুর্দা ? দড়ির খাটের চতুৰ্দোলায় চেপে আসবেন এই দিক দিয়ে, আমি মাল গেঁথে দাড়িয়ে থাকব তখন । এই বলিয়া দ্রুতপদে খিড়কির দ্বার দিয়া বাহির হইয়া গেল । সে যে ভয়ানক রাগ করিয়া গেল তাহ অত্যন্ত মুম্পষ্ট । ব্যর্থ পরিহাসের এই তীব্র লাঞ্ছনায় প্রথমটা গোলোক অবাক হইয়া গেলেন, পরে হাঃ হাঃ করিয়া খানিকটা কাষ্ঠহাসি হাসিয়া কহিলেন, মেয়ে ত নয়, যেন বিলিতি পণ্টন ! এ না হয় দাদী-নাতনী সম্পর্ক—বলতেও পারে, কিন্তু সেদিন রাস্কর মুখে শুনলাম নাকি, যা মুখে এসেচে তাই বলেচে ! মা-বাপ পৰ্য্যন্ত রেয়াং করেনি । গোড়ায় জগদ্ধাত্রীর ঠিক এই ভয়ই ছিল, কেবল মাঝখানে আশা করিয়াছিলেন পরিহাসের মধ্য দিয়া বুঝি এবারের মত ফাড় কাটিয়া গেল। হয়ত কাটিয়াই যাইত, শুধু মেয়েটাই আবার নিরর্থক খোচা মারিয়া বিবরের সপকে বাহিরে আনিয়া দিল । কন্যার প্রতি র্তাহার বিরক্তির অবধি রহিল না, কিন্তু প্রকাশ্বে সবিনয়ে কহিলেন, না মামা, সন্ধ্য ত সে-সব কিছুই বলেনি। মাসি তিলকে তাল করেন, সে ত তুমি বেশ জানো ? গোলোক কহিলেন, তা জানি । কিন্তু আমার কাছে করে না । জগদ্ধাত্রী কহিলেন, আমি যে তখন দাড়িয়ে মামা ? গোলোক হাসিয়া বলিলেন, তা হলে ত আরও ভাল । শাসন করতেও বুঝি পারলিনে ? এই হাসিটুকুতে জগদ্ধাত্রী মনে মনে একটু বল পাইয়া সক্রোধে কহিলেন, শাসন ? তুমি দেখো দিকি মামা, ওর কি দুৰ্গতিটাই আমি করি! গোলক স্নিগ্ধভাবে বলিলেন, থাক দুৰ্গতি করে কাজ নেই—বিয়ে হলে, সংসার ঘাড়ে পড়লে আপনিই সব শুধরে যাবে, তবে শাসনে একটু রাখিস । কালটা বড় ভয়ানক কিনা। অরুণ আসে আর ? জগদ্ধাত্রী ভয়ে মিথ্যা বলিয়া ফেলিলেন, অরুণ ? না:– গোলোক বলিলেন, ভালই । ছোড়াটাকে দিনে আসতে । অনেক রকম কানাকানি শুনতে পাই কিনা ! অরুণকে সন্ধ্যা ছেলেবেলা হইতে দাদা বলিয়া ডাকে । সে বিলাত যাইবার পূৰ্ব্ব পর্যন্ত উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সৌহার্দ্য ছিল, কিন্তু সে ব্রাহ্মণ বংশের এতটাই নীচের ধাপের যে, এই স্নেহ কখনও কোন কারণেই যে আর কোন আকারে রূপান্তরিত হইয়া উঠিতে পারে, এ সংশয় স্বপ্নেও মায়ের মনে ছায়াপাত করে নাই। কিন্তু কিছুদিন হইতে সন্ধ্যার আচরণে ও কথায়-বাৰ্ত্তায় মাঝে মাঝে এমনই একটা তীব্র জাল আত্মপ্রকাশ করিয়া ফেলিত যে তাঁহার মুদ্রিত চক্ষেও তাহার আভাস পড়িত, কিন্তু শেষ পর্য্যন্ত জিনিসটা এতখানিষ্ট অসম্ভব যে এ লইয়া উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন ՖԵrՀ