পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নয়নতার বিরক্তির কারণ অনুভব করিয়া ঠিক ওষুধ দিল। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া ধীরে ধীরে কহিল, তাই আমি ভাবছিলুম দিদি, লোকে কি করে হাতে এত টাকা করে। আমাদের পাড়ায় যদুবাৰু, গোপালবাবু, হারাণ সরকার কেউ ত আমার বটুঠাকুরের অৰ্দ্ধেক রোজগার করে না, তবু তাদের কারও লাখ টাকার কম ব্যাঙ্কে জমা নেই। তাদের পরিবারের হাভেও দশ-বিশ হাজারের কম নেই। সিদ্ধেশ্বরী ঈষৎ আকৃষ্ট হইয়া কহিলেন, কি করে জানলে মেজবোঁ ? নয়নতারা কহিল, ইনি যে ব্যাঙ্কের সাহেবকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন । তারা সব এর বন্ধু কিনা । কাল গোপালবাবুর স্ত্রী আমার কথায় অবিশ্বাস করে বললে, এ কি একটা কথা মেজবোঁ যে, তোমার দিদির হাতে টাকা নেই? যেমন করে হোক— সিদ্ধেশ্বরী জর ভুলিয়া উঠিয়া বসিয়া নয়নতারার সম্মুখে চালির গোছাটা ঝনাং করিয়া ফেলিয়া দিয়া বলিলেন, বাক্স পেটরা তুমি নিজের হাতে খুলে দেখ না মেজবোঁ, সংসার-খরচের টাকা ছাড়া কোথাও যদি লুকোনো একটা পয়সা দেখতে পাও । যা করৰে ছোটবোঁ। আমার কি একটা কথা বলবার জো ছিল ! এমন সোয়ামীর হাতে পড়েছিলুম মেজবোঁ, যে কখনো একটা পয়সার মুখ দেখতে পেলুম না। তেমনি শাস্তিও হয়েচে । এখন সে সৰ্ব্বস্ব নিয়ে চলে যাচ্ছে—কি করবে তার ? কিন্তু আমার হাতে টাকা থাকলে সে টাকা ঘরেই থাকত, না এমনি করে জলে যেত তা বল দেখি মেজবোঁ ? মেজৰে মাথা নাড়িয়া কহিল, সে সত্যি কথা দিদি ! সিদ্ধেশ্বরীর মন শৈলর বিরুদ্ধে আবার শক্ত হইয়া উঠিল। এতদিন যে তিনি নিজেই শৈলকে মানুষ করিয়া নিজের সিন্দুকের চাবি তাহার হাতে দিয়া, আপনি ছোট হইয়া সংসারের মধ্যে তাহাকে বড় করিয়া রাখিয়াছিলেন, এখন সে কথাটা একেবারে ভুলিয়া গেলেন । বলিলেন, একটা লোক রোজগারী, আর এত বড় সংসার র্তার মাথায়, তারই বা দোষ দিই কি করে বল দেখি ! নয়নতারা সায় দিয়া বলিল, সে ত সবাই দেখতে পাচ্ছে দিদি ! একটু চুপ করিয়া নয়নতারা মৃদ্ধ মৃদ্ধ বলিতে লাগিল, আমাদের গায়ের নন্দ মিত্তির একজন ডাকসাইটে কেরানী । ছোটভাইকে মানুষ করতে, লেখাপড়া শিখাতে, তার ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে নিজের হাতে আর কানা-কড়িটি রাখলে না। বড়বে। বলতে গেলে ধমকে জবাব দিত। সিদ্ধেশ্বরী কথার মাঝখানেই বলিয়া উঠিলেন, ঠিক আমার দশা আর কি। নয়নতারা কছিল, তা বইকি। বড়বোঁকে নন্দ মিত্তির ধমকে বলত, তোমার তাৰনা কি ? তোমার নরেন রইল। তাকে যেমন মানুষ করে উকিল করে দিলুম, శిశుశీ