পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বেশ ত, এখন থেকে তুমিই বরো মেজবোঁ । বলিয়া সিন্দুকের চাবিটা কিন্তু নিজের আঁচলেই বাধিয়া ফেলিলেন । দিন কাটিতে লাগিল। নয়নতারা সহস্ৰ কৌশল উদ্ভাবন করিয়াও লোহার মিলুকের চাবিট। আর নিজের আঁচলে বাধিতে সমর্থ হইল না। নয়নতারা অত্যন্ত কৌশলী এবং চতুর, অনেকখানি ভবিষ্ণুং ভাবিয়া কাজ করিতে পারিত। কিন্তু এই একটা তাহার বড় রকমের গোড়ায়-গলদ হইয়া গিয়াছিল যে, স্বার্থের জন্য নিরীহ লোকের মনে সংশয়ের বীজ বপন করিলে যথাকালে তাহার ফলভোগ হইতে নিজেকেও দূরে রাখা যায় না। সে শত্রুপক্ষকেও যেমন সন্দেহ করিতে শিখে, মিত্রপক্ষের উপরও তেমনি বিশ্বাস হারায় স্বতরাং সিদ্ধেশ্বরী যে মুহূর্তে ছোটবোঁয়ের প্রতি বিশ্বাস হারাইয়াছেন, মেজবোঁকেও ঠিক সেই মুহূর্তেই অবিশ্বাস করিতে শিথিয়াছেন। 3. কোন একটা অভাব লইয়া—তা সে যত গুরুতরই হোক, মানুষ অনস্তকাল শোক করিতে পারে না। সিদ্ধেশ্বরীর কাছে তাহার শয্যার শূন্তত ক্রমশঃ পূর্ণ হইয়া জালিতে লাগিল ৷ শৈলর ঘরের দিকটা তিনি মাড়াইতেই পারিতেন না, এখন সে বায়ালা স্বচ্ছদে পার হইয়া যান—মনেও পড়ে না। কানাই-পটলের সংবাদ তিনি বিবিধ উপায়ে সংগ্রহ করিবার জন্য অহরহ উৎকণ্ঠিত থাকিতেন, এখন সে উৎকণ্ঠীর অর্ধেক তিরোহিত হইয়া গেল। এইরূপে মুখে-দুঃখে এক বৎসর ঘূরিয়া গেল । সেদিন হঠাৎ সিদ্ধেশ্বরীর কানে গেল যে, দেশের বিষয় লইয়া আজ ছয় মাস ধরিয়া ছোট দেবরের সহিত র্তাহাজের মামলা চলিতেছে। মোকদ্দমা চালাইতেছে হরিশ নিজে । দেওয়ানি ত চলিতেছেই, গোটা স্থই ফৌজদারী ইতিমধ্যে হইয়া গেছে। খবর শুনিয়া সিদ্ধেশ্বরী ভয়ে ভাবনায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিলেন। স্বামীর নিকট হইতে সম্পূর্ণ কৌতুহল নিবৃত্তি করিবার মত সংবাদ জানার স্ববিধ হইবে না জানিয়া তিনি সন্ধ্যার সময় হরিশের কাছে গিয়া উপস্থিত হইলেন। বলিলেন, বল কি ঠাকুরপো, ছোটঠাকুরপো করেচে তোমার দাদার সঙ্গে মামলা ? হরিশ উচ্চ অঙ্গের একটুখানি হাপ্ত করিয়া কছিলেন, তাই ত হচ্চে বৌঠান । ኟዓ•