পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (ত্রয়োদশ সম্ভার).djvu/১০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মনোহর কহিলেন, আমাদের এই সীতা-সাবিত্রীর দেশে এমন শিক্ষা উনি গৃহস্থ মেয়েদের দেবেন ? স্বমিত্রা সায় দিয়া বলিলেন, দেওয়া ত উচিত। মেয়েদের কাছে শুধু অর্থহীন বুলি উচ্চারণ না করে নবতার যদি বলেন যে, এই দেশে একদিন সীতা আত্মসম্মান রাখতে স্বামী ত্যাগ করে পাতালে গিয়েছিলেন এবং রাজকন্যা সাবিত্রী দরিদ্র সত্যবানকে বিবাহের পূৰ্ব্বে এত ভালবেসেছিলেন যে অত্যন্ত স্বল্পায়ু জেনেও তাকে বিবাহ করতে তার বাধেনি, এবং আমি নিজেও যে দুবৃত্ত স্বামীকে ভালোবাসতে পারিনি, তাকে পরিত্যাগ করে এসেচি, অতএব, আমার মত অবস্থায় তোমরাও তাই কোরো, - এ শিক্ষায় ত দেশের মেয়েদের ভালই হবে মনোহরবাৰু। মনোহরের ওষ্ঠাধর ক্রোধে কঁাপিতে লাগিল, প্রথমটা ত তাহার মুখ দিয়া কথাই বাহির হইল না, তারপর বলিয়া উঠিলেন, তাহলে দেশ উচ্ছন্নে যাবে। হঠাৎ হাত জোড় করিয়া কহিলেন, দোহাই আপনাদের, নিজেরা যা ইচ্ছে করুন, কিন্তু অপরকে এ শিক্ষা দেবেন না । ইউরোপের সভ্যতা আমদানি করে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু মেয়েদের মধ্যে তার প্রচার করে সমস্ত ভারতবর্ষটাকে আর রসাতলে পাঠাবেন না । সুমিত্রার মূখের উপর বিরক্তি ও ক্লাস্তি যেন একই সঙ্গে ফুটিয়া উঠিল, কহিলেন, রসাতল থেকে বাচাঁবার যদি কোন পথ থাকে ত এই। কিন্তু, ইউরোপীয় সভ্যতা সম্বন্ধে আপনার বিশেষ কোন জ্ঞান নেই, সুতরাং, এ নিয়ে তর্ক করলে শুধু সময় নষ্ট হবে। অনেক সময় গেছে,—আমাদের অন্য কাজ আছে । মনোহরবাবু যথাসাধ্য ক্রোধ দমন করিয়া কহিলেন, সময় আমারও অপৰ্য্যাপ্ত নয়। নবতারা তাহলে যাবেন না ? - নবতারা এতক্ষণ মূখ তুলিয়াও চাহে নাই, সে মাথা নাড়িয়া জানাইল, না । মনোহর সুমিত্রাকে প্রশ্ন করিলেন, এর দায়িত্ব তাহলে আপনারাই নিলেন । নবতারাই ইহার জবাব দিল, কহিল, আমার দায়িত্ব আমিই নিতে পারবো, আপনি চিন্তিত হবেন না । মনোহর বক্ৰদূষ্টিতে তাহার প্রতি চাহিয়া স্বমিত্রাকেই পুনশ্চ প্রশ্ন করিলেন, কহিলেন, আপনাকেই জিজ্ঞাসা করি, স্বামীগৃহে বিবাহিত জীবনের চেয়ে গৌরবের বস্তু নারীর আর কিছু আছে আপনি বলতে পারেন ? সুমিত্ৰা কহিলেন, অপরের যাই হোক, অন্ততঃ, নবতারার স্বামীগৃহে তার বিবাহিত জীবনকে আমি গৌরবের জীবন বলতে পারিনে । এই উত্তরের পরে মনোহর আর আত্মসংবরণ করিতে পারিলেন না। অত্যন্ত >$