শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সন্ধ্যার পর বৈকুণ্ঠ দোকানের কাজ সারিয়া খাতা বগলে ধরে আসিয়া উভয় পুত্রের বিবরণ শুনিয়া ভালো-মন্দ কিছুই বলিলেন না। ছেলেদের ভার তাহাজের মায়ের উপর দিয়াই তিনি নিশ্চিন্ত ছিলেন। হাত-পা ধুইয়া জল খাইয়া পান চিৰাইতে চিবাইতে ধীরে-সুস্থে নিত্যনিয়মিত খাতা দেখিতে বসিয়া গেলেন । ২ আমার মা ভবানী কই গো ? বলিয়া লাঠিরগোটা-দুই ঠোকা দিয়া ইস্কুলের যষ্ঠ শিক্ষক জয়লাল বাড়ুযে সেইদিন সন্ধ্যাকালেই বৈকুণ্ঠ মজুমদারের বাড়ির ভিতরে জাসিয়া দাড়াইলেন। তিনি বৈকুণ্ঠের গোলদারী দোকানে চাল-ডাল-ঘি-তেল বাবদে অনেক টাকা বাকী ফেলিয়া গৃহিণীকে মাতৃ-সম্বোধন করিয়াছিলেন । ভবানী সন্ধ্যার কাজকৰ্ম্ম সারিয়া বারান্দায় মাদুর পাতিয়া ছেলে-দুটিকে কোলের কাছে লইয়া বসিয়াছিলেন। শশব্যস্তে উঠিয়া আসন পাতিয়া দিলেন। বাড়ুৰ্য্যেমশাই উপবেশন করিয়াই শুরু করিয়া দিলেন, ই, রত্নগর্ভ বটে মা তুমি ! ছেলে পেটে ধরে ছিলে বটে। এত ছোকরার মধ্যে তোমার বিনোদ একেবারে ফাস্ট ! একেবারে ডবল প্রমোশন ! ওর নম্বর পাওয়া দেখে হেডমাস্টার মশাইয়ের পর্য্যস্ত তাকৃ লেগে গেছে। আজ তাকেও গালে হাত দিয়ে দাড়াতে হয়েচে ! আমিও ত মা, এই ছেলে চরিয়েই বুড়ো হলুম ; কিন্তু তোমার এই বিনোদ ছেলেটির মত ছেলে কখনও চোখে দেখলুম না । আমি এই বলে যাচ্ছি আজ, ও ছেলে তোমার হাইকোর্টের জজ হবে—হবেই হবে । ভবানী চুপ করিয়া রহিলেন । বাড়ুযেমশাই উৎসাহিত হইয়া বলিতে লাগিলেন, আর এই গোকৃলো ! কিসে আর কিসে ! এ ছোড়া এত বড় গাধার সর্দার মা, একজামিনের দিন আমিই ত ছিলুম এদের পাহারায়—কত ছেলে টেবিলের নীচে দিব্যি বই খুলে কপি করে দিলে—ওরই ডাইনে বায়ে মল্লিকদের দুই ছেলে বই খুলে লিখতে লাগল—আমি দেখেও দেখলুম না—বরং হতভাগাটাকে চোখ টিপে একটা ইসার পৰ্যন্ত করে দিলুম, কিন্তু সেই যা বোদা বলদের মত হাত গুটিয়ে বসে রইল, কোন Y o 0.
পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১১৪
অবয়ব